ডা. মো. ওসমান গনি (শিশির) : ইউরিয়ার সার খাইয়ে হৃষ্টপুষ্টকরণকৃত (মোটাতাজা) গরু কোরবানীর জন্য বা মানব খাদ্যের জন্য ব্যবহার করা যাবে কিনা? এই প্রশ্নটি আমি অনেক সাধারণ এবং উচ্চ শিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি এবং প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ধারণা সঠিক নয়।
গরুর খাদ্য ও মানুষের খাদ্য তালিকা এবং গরুর খাদ্য ও মানুষের খাদ্য হজম প্রক্রিয়া এক নয়। ভাত, পোলাও, মিষ্টি মানুষের জন্য উপাদেয় খাবার হলেও গরুর জন্য তা এসিডোসিস/ব্লট নামক মেটাবলিক রোগের কারণ এবং দ্রুততার সাথে চিকিৎসা না করাতে পারলে মৃত্যুই যার একমাত্র পরিণতি।
আবার অল্প পরিমান ইউরিয়াও মানব শরীরের বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী। কারণ, ইউরিয়া হজম বা বিশ্লেষণ করার মত সিস্টেম মানুষের পাকস্থলীতে নেই। তাই, ইউরিয়া সার মানুষের জন্য বিষ।
অপরদিকে গরুর পাকস্থলির একটা অংশ (রুমেন: মৌচাকের মত দেখতে) ইউরিয়াকে ভেঙ্গে এমাইনো এসিডে পরিনত করতে পারে। যেই এমাইনো এসিড আমিষ তৈরির একক, যার ফলে গরুর শরীরে ইউরিয়া প্রবেশ করার পর তা সরাসরি আমিষ তথা গরুর মাংস বৃদ্ধিতে কাজে লাগে। তাই গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো খারাপ কোন কাজ নয়। বরং এটি গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। তবে সেটি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে এবং ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণিপুষ্টিবিদ এর পরামর্শ অনুযায়ি ফরমুলা অনুসরণ করে খাওয়াতে হবে। না জেনে, নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমাফিক খাওয়ানো যাবেনা।
আমরা কেউই সবজান্তা নই। প্রত্যেক বিষয়েই নির্দিষ্ট কিছু বিশেষজ্ঞ থাকেন। আমরা যার কাজ তাকে করতে দেই। আসুন আমরা আগে জানি পরে প্রচার করি।ভুল ধারনাবশত অপপ্রচার থেকে দূরে থাকি।
নেহাতই প্রচার পাওয়ার নেশায় অন্য ডিসিপ্লিনের কোন বিষয় নিয়ে সাধারণ জ্ঞান প্রচার করা থেকে বিরত থাকি। কৃষক ও দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখি।
লেখক: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি পাবলিক হেল্থ এন্ড মাইক্রোবায়োলজি শাখা, প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।
(আংশিক পরিমার্জিত করণে ডা. রেজাউল ইসলাম)