ডা. মোহাম্মদ লিপন তালুকদার (ডিভিএম) : যেকোনো কাজের আগে পরিকল্পনা করা জরুরি। সাধারণত বেশির ভাগ খামারি ভাইয়েরা কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই খামার তৈরি করা শুরু করেন। সবচেয়ে বড় ভুলটি তারা এখানেই করেন। যে ঘরে মুরগি পালন করবেন সেই ঘরটাই যদি ভুলভাবে তৈরি করা হয় সেই খামার থেকে লাভ আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুইনা। তাই আসুন যে ধরনের মুরগিই পালন করুন না কেন আগে জানতে হবে তাদের থাকার ঘর /বা লালন পালন এর জায়গাটা কেমন হওয়া উচিত। আসুন জেনে নেই মুরগির পালন এর ঘর কেমন হওয়া উচিত-
পোলট্রি খামার তৈরির প্রধান কিছু শর্ত :
১. খামারের অবস্থান ও দিক।
২. শেডের অবকাঠামো।
৩. খামারের প্রস্থ ও ঘরের উচ্চতা।
৪. প্রজাতি (ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালী) অনুযায়ী খামারের জায়গা।
৫. বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা।
৬. খামারে বিদ্যুৎ সংযোগ।
৭. নিরাপত্তা বেষ্টনী।
খামারের অবস্থান ও দিক : অধিকাংশ খামারে লোকসান হওয়ার প্রধান কারণ হলো খামারের অবস্থানগত ভুল বা দিকগত ভুল। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী মূলত বাতাস দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। যদি খামারের অবস্থান লম্বালম্বি (দৈর্ঘ্য বরাবর) উত্তর দক্ষিণ দিকে হয় তাহলে সকালবেলা সম্পূর্ণ শেডে পূর্বদিক থেকে এবং বিকালবেলা পশ্চিম দিক থেকে সম্পূর্ণ শেডে রোদ পড়বে। যার ফলে শেড সবসময়ই উত্তপ্ত থাকবে এবং শেডের মুরগী সবসময়ই বিভিন্ন সমস্যা যেমন হিট স্ট্রেস, গ্যাসপিং, লো প্রডাকশন ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবে।
খামারের অবস্থান যদি লম্বালম্বি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে হয় তাহলে ventilation (বাতাস চলাচল) খুবই কম হবে। কারণ, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বাতাসের প্রবাহ খুব কম হয়ে থাকে। তাই খামারের দৈর্ঘ কখনো উত্তর দক্ষিণ বরাবর করা যাবে না। খামার লম্বায় পূর্ব পশ্চিম দিক হতে হবে।
সুবিধা:
১. প্রস্থ উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়ায় খামারে বাতাস চলাচল ভালো হবে।
২. পূর্ব ও পশ্চিম দিক হতে সকালে ও বিকালে সূর্যের আলো তীব্রভাবে পড়বে না।
খামারের ভুল অবস্থান:
– রাস্তার পাশে।
– নিচু জমিতে ।
– জনবসতিপূর্ণ এলাকায়।
-কলকারখানার পাশে।
সঠিক অবস্থান:
১. প্রধান রাস্তা থেকে দূরে।
২. উঁচু জায়গায়।
৩. কলকারখানা থেকে দূরে।
খামারের প্রস্থ এবং ঘরের উচ্চতা : শেড ঘরের প্রস্থ ২২-২৩ ফুট (২৪ ফুটের বেশি হওয়া যাবে না)। লম্বা সুবিধা মতো দেয়া যাবে এবং পার্শ্বে উচ্চতা ৬-৭ ফুট (লিটারে পালনের ক্ষেত্রে) ও মাঝের উচ্চতা ৯-১০ ফুট (দোচালা ঘরের ক্ষেত্রে ) । দুই পাশে চালের বর্ধিত অংশ ২ ফুট ( দমকা হাওয়া বা ঝড়ো বৃষ্টি থেকে শেডের মুরগিকে বাঁচানোর জন্য) ।
– ১০০০ ব্রয়লারের জন্য প্রয়োজন ১২০০ বর্গফুট জায়গা। ব্রয়লারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো মাচা পদ্ধতিতে পালন করা। এতে লিটার ব্যবহার এর ঝামেলা থেকে বাচা যায়।
– ১০০০ সোনালী মুরগীর জন্য প্রয়োজন ৭৫০ বর্গফুট।
– গরম ও ঠাণ্ডা থেকে থেকে বাঁচাতে টিন শেড এর পরিবর্তে সিমেন্ট এর শিট দিয়ে চাল বানান।
– শেডে স্বাভাবিক বায়ু চলাচল বজায় রাখতে বাশের চটা দিয়ে বেড়া না বানিয়ে গুনার তৈরি নেটের বেড়া দিন। এতে বাতাস চলাচল বাড়বে, শেড এ গ্যাস কম জমবে।
বেশির ভাগ মানুসই খুব উৎসাহী হয়ে খামার করতে শুরু করেন। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুলভাবে খামার তৈরি করেন। যার ফলে খামারে মরটালিটি বেশি হয়। রোগবালাই লেগেই থাকে। সেজন্য production অনেক কম হয়। খামারি লোকসান করতে করতে এক সময় খামার করা ছেড়ে দেন। তাই আসুন, ভালো উৎপাদন পেতে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে খামার তৈরি করি এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।
লেখক: টেকনিক্যাল সার্ভিস অফিসার, সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লি.