এ.কে.এম. সালাহ উদ্দিন সরকার : বাংলাদেশে সাধারণত বেড়জাল, ফাঁদজাল ও তলদেশে ট্রলনেট ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকার চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নদীর মোহনায় নদীতে এবং চিংড়ির ঘেরে কোরাল বা ভেটকি মাছ পাওয়া যায়। এ মাছ চাষে যেমন কিছু সমস্যা রয়েছে তেমনি রয়েছে সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায়।
সমস্যা
১. প্রাকৃতিক উৎসে পোনার স্বল্পতা এবং মাছের কৃত্রিম প্রজননে সমস্যা ও ভেটকি মাছের প্রজনন এবং দ্রুত বৃদ্ধির জন্য লবণাক্ত পানি অত্যাবশ্যক।
২. প্রজনন এবং দ্রুত বৃদ্ধির জন্য লবণাক্ত পানি দরকার।
৩. রাক্ষুসে এবং স্বজাতিভোজী বৈশিষ্ট্যর কারণে ভেটকি মাছের চাষে মৃত্যুহারের আধিক্য।
৪. ট্রাস ফিস সরবরাহে সমস্যা এবং তা ব্যয়বহুল।
উত্তরণের উপায়
আমি মনে করি আমাদের দেশের সব জেলাতেই কোরাল বা ভেটকি চাষ হওয়া সম্ভব। কিন্তু হ্যাচারি স্থাপনের জন্য যেহেতু ২৯ থেকে ৩২ পিপিটি লবণাক্ততা দরকার তাই কক্সবাজার সবচেয়ে উত্তম জায়গা হতে পারে। এছাড়াও কুয়াকাটায়ও ভেটকি মাছের হ্যাচারি হতে পারে।
ভেটকি মাছের ফিডে প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ৫০ ভাগ প্রাণীজ প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়। এই মাছের খাবারে যথাযথ প্রোটিন ছাড়াও বিশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভেটকি মাছের কোনো রেডি ফিড তৈরি হয় নাই। তবে দেশের চাষিদের জন্য সু-খবর হচ্ছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে BCSIR (ঢাকা সাইন্স ল্যাবে ) এ চলছে RAS (Recirculating Aquaculture) পদ্ধতিতে কোরাল/ভেটকি (Seabass) মাছ চাষ। কোরাল/ভেটকি (Seabass) মাছের ফিড বিশেষ প্রযুক্তিতে প্রস্তুত বিধায় গত প্রায় ৬ মাস প্রকল্পটি শুরু করতে পারছিলেন না। অবশেষে এই ফিড নরওয়ের বিশ্বখ্যাত কোম্পানি (Skretting) স্কেটিং এর “Stella B BF” আমদানিতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে এডভান্স এগ্রোটেক (বিডি) লিমিটেড। আমরা আশা করছি এই মাছের চাষ ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে। তার সাথে সাথে আরো আশা করছি একদিন গুণগত মান ঠিক রেখে বাংলাদেশেই তৈরি হবে এই ফিড।
সঠিক মাত্রায় খাবার না দিলে বড় মাছ ছোটটিকে খেয়ে ফেলবে এবং মাছ ধরার সময় সংখ্যায় কম পাবেন। ভালো মানের খাবার দিলে ট্রাস ফিস সরবরাহেও সমস্যা থাকবেনা।
পরিশেষে বলবো, ভেটকি মাছের স্বাদ তো আছেই, আবার কাঁটা কম থাকায় দেশে-বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভেটকি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদুপানি এবং উপকূলীয় অঞ্চলের আধা-লবণাক্ত ও লবণাক্ত পানিতে ভেটকি চাষ করা যায় বলে বাংলাদেশে এর চাষাবাদ এলাকা অনেক বড়।
আমাদের তাপমাত্রা ও আবহাওয়া ভেটকি চাষের জন্য উপযোগী, আমাদের পাশের দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা ও অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভেটকির কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। এছাড়াও ভেটকি মাছের ফিড আপাতত আমদানি এবং ভেটকি মাছের চাষ ছড়িয়ে পড়লে গুণগত মান ঠিক রেখে বাংলাদেশেই তৈরি হবে এই ফিড। এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতা ও বেসরকারি উদ্যোগতাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সত্ত্বাধিকারী, সরকার এগ্রি কমপ্লেক্স (একটি জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্ম); ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এডভান্স এগ্রোটেক (বিডি) লিমিটেড। akmsus@gmail.com