দিনাজপুর প্রতিনিধি: শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত রেজিষ্ট্রার, প্রক্টর ও এডভাইজারের পদত্যাগ ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে অচল হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধনের মাধ্যমে এসব দাবি জানায় রসায়ন, পদার্থ ও গণিত বিভাগের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মুখে কালো ও মাথায় কাফনের কাপড় বেধে প্রশাসন ভবনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন ৬১ জন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত লাঞ্ছিত শিক্ষক। লাঞ্ছিত শিক্ষকদের সাথে সোমবার থেকে ক্লাস ও মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শতাধিক শিক্ষক। চলমান আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে সোমবার কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর বিকেল ৪ টার দিকে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক পূর্বসুচী অনুযায়ী কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদারের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনা সভায় শিক্ষকরা নিয়ম অনুযায়ী প্রদেয় বর্ধিত বেতন কেনো বন্ধ করা হচ্ছে তা কোষাধক্ষ্যের কাছে জানতে চান। কোষাধক্ষ্য এক পর্যায়ে বলে বর্ধিত বেতন প্রদান করা সম্ভব নয়। আর প্রশাসন সেটিও আপনাদের দিতে রাজি নয়। আপনাদের যা করার আছে করেন। এমতাবস্থায় কোষাধক্ষ্য উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং কয়েকজন শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে থাকেন। ঠিক ওই সময় প্রক্টর অধ্যাপক খালেদ হোসেন, ডিন অধ্যাপক ফাহিমা খানম, রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম, এডভাইজার অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম উপস্থিত হন। তারা সঙ্গে করে একদল উৎশৃংখল ছাত্র সশন্ত্র অবস্থায় নিয়ে আসেন। কোষাধক্ষ্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে প্রক্টর ও এডভাইজারের প্রত্যক্ষ মদদে উৎশৃংখল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় ও কয়েকজন মহিলা শিক্ষকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, শান্তিপূর্ণভাবে এ বিষয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষকরা কোষাধক্ষ্যের সাথে কয়েকটি আলোচনা সভাও করেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় লাঞ্ছিত শিক্ষক হাফিজ আল হোসেন ও ফাতিহা ফারহানা লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রক্টর, এডভাইজার ও রেজিষ্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মুখে কালো কাপড় বেধে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ওই ৬১ জন শিক্ষক। চলমান কর্মসূচীতে রোববার তারা মাথায় কাফনের কাপড় বেধে প্রতিবাদ জানায়। প্রক্টর, এডভাইজার ও রেজিষ্ট্রারের পদত্যাগ ও বেতন বৈষম্য নিরসন না হলে শিক্ষকরা আমরন অনশন কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, লাঞ্ছিত শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন ও হামলা ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত সোমবার সকল ক্লাস বজর্ন করে। মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) ফোরামের শতাধিক শিক্ষক ক্লাসের পাশাপাশি সকল ধরনের পরীক্ষা থেকেও বিরত থাকে। লাঞ্ছিত ও প্রগতিশীলের দেড় শতাধিক শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকায় বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৭টি বিভাগে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়াও কৃষি, মাৎস্য, প্রকৌশল, ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিমেল সায়েন্স, সোস্যাল সায়েন্স এন্ড হিউমিনিটিস ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ৬০-৬৫ শতাংশ ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাঞ্ছিতের ঘটনার দিনই সহকারী অধ্যাপক ফাতিহা ফারাহানা ও সাবরিনা মোস্তাফিজ বাদী হয়ে মহিলা শিক্ষকের লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির জন্য দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় পৃথক পৃথক ২টি মামলা এজাহার করে। কিন্তু মামলাগুলো এখনও নথিভুক্ত হয়নি। এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক খালেদ হোসেন ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল ইসলামকে আসামী করা হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থী মামুন, হারুন, রফিক, পলাশ, তারেক বলেন, স্যারদের মুখে কালো কাপড় ও মাথায় কাফনের কাপড় দেখতে হবে তা আমরা কল্পনাও করিনি। কিন্তু আজ প্রশাসনের খামখেয়ালীপনায় তা ঘটেছে। আমরা সেশনজটের কালো থাবায় পড়তে যাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা তা মানতে পারি না। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। প্রশাসনকে বলবো, অতি দ্রæত রেজিষ্ট্রার, প্রক্টর ও এডভাইজারকে বরখাস্ত করুন। সমস্যার সমাধান করুন। এ সময় বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক সাইফুর রহমান বক্তব্যে বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িত প্রক্টর, রেজিষ্ট্রার ও এডভাইজারের পদত্যাগসহ বিচার দাবি করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংকট সৃষ্টিকারী প্রশাসনের এসব ব্যক্তিদের পদত্যাগই একমাত্র সমাধান। মানববন্ধনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, পদার্থ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমিনুল ইসলাম ও গনিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুনুর রশীদ।
এ ঘটনায় রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম বলেন, ইউজিসি থেকে চিঠি আসলেই আমরা বেতন বৈষম্যের সমাধান করবো। আর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়নি। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীদের আমরা নিয়ে আসিনি। তারা কিভাবে এসেছে আমি জানি না।