শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে ডাকাতি: মাছ ও নগদ টাকা লুট

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় এফবি রিসান-১ নামের শরণখোলার একটি ফিশিং বোটে ডাকাতি হয়েছে। জলদস্যুরা জেলেদের মারধর ও সাগরে নিক্ষেপ করে নগদ লক্ষাধিক টাকাসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার জাল, মাছ, মোবাইল ফোন ও অন্য মালামাল লুটে নিয়েছে। দস্যুতার শিকার ফিসিং বোটটি বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে শরণখোলার রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফিরে আসে। দস্যুদের মারপিটে আহত ১৪ জেলেকে এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ডাকাতির স্বীকার ফিসিং বোটের মাঝি মো. নূর ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের জাহাজখাড়ী এলাকায় মাছ ধরার সময় ১৫-১৬ জনের একটি দস্যুদল নামবিহীন একটি ফিশিং বোটে এসে তাদের ট্রলারে হানা দেয়। দস্যুরা বোটে উঠেই জেলেদের মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে দস্যুরা বোটের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ এক লাখ টাকা, আহরিত তিন হাজার ইলিশ মাছ, ৪০ পিচ জাল, দুইটি জেনারেটর, দুইটি ব্যাটারি, ১৪টি মোবাইল সেট, ট্রলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা এ সময় তাদের ৬ জন জেলেকে সাগরে ফেলে দেয়। জালের দড়ি ও ফ্লোট (প্লাষ্টিকের ভাসনা) ধরে দুই-তিন ঘন্টা সাগরে ভেসে থাকার পর জেলেদের উদ্ধার করা হয়। দস্যুদের মধ্যে ৫-৬ জনের মুখোশ পরা ছিল। দস্যুবাহিনীর নাম জানা যায়নি। দস্যুদের মারধরে আহত জেলেরা হলেন, ট্রলারের মিস্ত্রি আজিজুল, মাঝি নুর ইসলাম, জেলে ইমাম হোসেন, নিয়ামুল, আ. রাজ্জাক, শামীম, মাসুম হাওলাদার, আ. আজিজ, রফিক শেখ, সাহেব আলী, আ. রব, বাচ্চু, মাসুম ও আনোয়ার হোসেন। এদের বাড়ি বাগেরহাট, ভোলা ও শরণখোলার বিভিন্ন এলাকায়। মাঝি আরো জানান, তারা গত ১২ জানুয়ারি রাতে ১৪ জন জেলেসহ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার এক পর্যায়ে তারা চট্টগ্রামের কাছাকাছি গভীর বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। গত রবিবার (২০জানুয়ারি) প্রথম চালানের মাছ চট্টগ্রামের একটি আড়তে বিক্রি করে আবার তারা সাগরে মাছ ধরতে নামে।

ফিশিং বোটের মালিক শরণখোলার রাজৈর গ্রামের মো. মনির হাওলাদার বলেন, বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে ট্রলারের মিস্ত্রি আজিজুলের মোবাইলে কল করলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে অন্য একজন রিসিভ করে। ট্রলারের খবর জানতে চাইলে কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়। এভাবে সারাদিন বিভিন্ন মোবাইল থেকে ওই নাম্বারে কল করা হয়, কিন্তু কোনো উত্তর না পাওয়ায় বুঝতে পারি ট্রলারটি কোনো বিপদে পড়েছে। ট্র্রলারের ইঞ্জিন আর জ্বালানী তেল ছাড়া সবকিছুই দস্যুরা নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে শরণখোলা থানায় অভিযোগ করা হবে।

এ ব্যাপারে শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ দিলীপ কুমার সরকার জানান, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগিরা এখনো থানায় অভিযোগ জানাতে আসেনি। তারা অভিযোগ দিলে এলে দস্যুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থাসহ তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

শরণখোলা উপজেলার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন অঞ্চলের দস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় জেলেরা এখন নিরাপদে মাছ ধরছে। কিন্তু পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এখনো দস্যুরা সক্রিয়। শরণখোলার বোটটি পূর্ব সাগরে ঢুকে পড়ায় দস্যুদের কবলে পড়ে সবকিছু হারিয়েছে। ওই অঞ্চলের দস্যু দমনে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সত্বেও পূর্ব বঙ্গোপসাগরে দস্যুরা এখনো সংগঠিত। আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি অবিলন্বে পূর্ব বঙ্গোপসাগরে দস্যু দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের।

This post has already been read 2701 times!

Check Also

যে জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়, ওই জেলার মানুষ গরিব হতে পারে না -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ভোলা সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ইলিশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে একসাথে কাজ …