ঢাকা সংবাদাতা: রপ্তানি বহুমুখীকরণে দেশের কৃষিখাত বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটরিয়ামে জাতীয় সবজি মেলার সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক (এম.পি) এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য এখন দুটি চ্যালেঞ্জ। জনগণের জন্য পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ এবং উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকাংশই তাদের আয় দিয়ে সবজি, ডিম ও দুধসহ প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য কিনে খেতে পারে না। তাই সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অভ্যন্তরের কাংখিত কৃষি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে অনেকক্ষেত্রে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন ও রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের বাজারও সম্প্রসারণ হবে। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাবে। আরো বাড়বে কৃষি উৎপাদন। নিশ্চিত হবে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের যোগান।
শুধু সচেতনতার অভাবে দেশের মানুষ সবজি খায় না, এ কথার সঙ্গে ভিন্নমত পোষন করে মন্ত্রী বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা সব কিছু কিনতে চায়। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতার অভাবে বাজারে কম দামের মুলার মতো পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কিনতে পারে না। যা কৃষি উন্নয়নের অন্তরায়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কৃষিকে এগিয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য পূরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, এবং কৃষি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করার পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। আর এ জন্য কৃষি খাতের সকলের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।
কৃষির অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, হাইব্রিড বীজসহ নানা সীমাবদ্ধতায় এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ভ‚ট্টার জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অনূক‚ল। দেশের প্রয়োজনীয় হাইব্রিড বীজ এখনও আমদানি করেই মেটাতে হয়। একটি বা দুটি ছাড়া আমাদের বিজ্ঞানীরা আর কোন হাইব্রিড বীজ আবিষ্কার করতে পারেননি। কেন তারা হাইব্রিড জাতের বীজ আবিষ্কার করতে পারছেন না, তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে। টাকার অভাব নেই, তবুও বিজ্ঞানীরা কেন পারছেন না?
সেমিনারের বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শী বলেন, অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে বিগত ১০বছরে কৃষিক্ষেত্রে হয়েছে বিপ্লব। দেশে খাদ্যের অভাব নেই। এ কৃতিত্ব কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের। দেশে উৎপাদিত ফসলের ২৫-৪০ ভাগ সংগ্রোহত্তর পর্যায়ে নষ্ট হয়। এ ক্ষতির ১০ভাগও যদি কমানো যায় তাহলে দেশের খাদ্য ভান্ডার আরো সমৃদ্ধ হবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের কৃষি সংশ্লিষ্টরা এ দায়িত্বও পালন করবে। তিনি আশাব্যক্ত করে বলেন, আমি আরেকবার সবজি মেলায় আসবো, আর তখন মেলার প্রতিপাদ্য বদলে হবে ‘নিরাপদ সবজি চাষ করব চাষ, রপ্তানি করব বার মাস’।
সেমিনারের অপর বিশেষ অতিথি জাতীয় সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, দুর্যোগ দুর্বিপাকে পড়ে কৃষক যাতে সর্বশান্ত না হয়, সেজন্য দেশে কৃষি বীমা চালু করা দরকার। বাজারে পাওয়া কোনো কোম্পানীর বীজ ব্যবহার করে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে কোম্পানীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বীজের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঐ কোম্পানীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে কৃষককে দিতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো: নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে নির্ধারিত ‘পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনে বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি চাষ’ বিষয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. গোলাম মোর্শেদ আব্দুল হালিম। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল, হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনজুরুল হান্নান ও হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা ড. মো. আব্দুল জলিল ভ‚ঁঞা। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক।
কৃষিমন্ত্রী এর আগে কেআইবি চত্বরের তিন দিনের জাতীয় সবজি মেলা ২০১৯ এর উদ্বেধন করেন। তিনি এ সময় অতিথি ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখেন। মেলা উপলক্ষ্যে সকালে এক বর্ণাঢ্য র্যালি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাাজা থেকে শুরু করে কেআইবি চত্বরে শেষ হয়। মেলায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭১ টি স্টল ও ৫টি প্যাভেলিয়ন অংশ নিচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকছে। মেলা চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ‘নিরাপদ সবজি করব চাষ, পুষ্টি মিলবে বার মাস’ প্রতিপাদ্যে চতুর্থবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। উদ্বাধনী দিনে মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শক মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখার পাশাপাশি সবজি চাষ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। মেলায় আগতদের অনেকে বিভিন্ন স্টল থেকে নিরাপদ ও পুষ্টিমানের সবজি কেনেন।