নিজস্ব প্রতিবেদক: “দেশে দানাদার ফসল, ফল, সবজি ও আলুর অপচয় হয় বছরে প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকার সমমানের। খাদ্যশস্যের এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি, ঠিক তেমনি খাদ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় নিম্ন আয়ের মানুষ। সার্বিকভাবে বিঘ্নিত হয় মান ও নিরাপত্তা। ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার কারণে টমেটোতো গড়ে ৩২.৯% ক্ষতি হয়। এর মধ্যে কৃষক পর্যায়ে ক্ষতি হয় ৬.৯%, বেপারী পর্যায়ে ৯.১%, পাইকারী পর্যায়ে ৮.০% এবং খুচরা বিক্রেতার নিকট ৮.৯% টমেটো অপচয় হয়। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ২২-৪০% ফল ও সবজির অপচয় হয়। গড়ে যার পরিমাণ ৩১%।”
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) হর্টেক্স ফাউন্ডেশন সম্মেলন কক্ষে “Post Harvest Management of Fruits and Vegetables for Safety & Quality Assurance” শীর্ষক কর্মশালায় অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান –এর উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে এসব তথ্য জানানো হয়।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ –এর চেয়াম্যান মো. মাহফুজুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর –এর মহাপরিচালক মীর নূরুল আলম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর –এর মহাপরিচালক মোছাম্মৎ নাজমানারা খানম, এসিআই ফর্মূলেশনস লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিস সুস্মিতা আনিস, এসিআই এগ্রোলিংক লিমিটেড –এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. একেএম ফারেয়েজুল হক আনসারী। হর্টেক্স ফাউন্ডেশন (এনএটিপি-২) পোস্ট হারভেষ্ট ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট ড. মো. আতিকুর রহমান।
এছাড়াও, খাদ্যের নিরাপত্তা ও গুণগতমানের নিশ্চয়তা সবজি ও ফসলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। জমি থেকে ফসল সংগ্রহের পর হতে ভোক্তার নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য অপচয় হয় এবং সংগ্রহোত্তর অব্যবস্থাপনার কারণে ফল ও সবজি অনিরাপদ হতে পারে বলে উপস্থাপিত প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
তিন ধরনের ঝুঁকি খাদ্যের মান কমিয়ে অনিরাপদ করে তুলে। এগুলো হলো অনুজীবিক ঝুঁকি, রাসায়নিক ঝুঁকি এবং ভৌত অবকাঠামোগত ঝুঁকি। সবজি ও ফল সংগ্রহ করে মাটিতে রাখা, অনিরাপদ পানি ব্যবহার করা এবং নোংরা প্যাকেজিং ব্যবস্থার কারণে খাদ্যফসলে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ায় আক্রমণ করে খাদ্যকে অনিরাপদ করে ফেলে। একইভাবে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অধিকমাত্রায় রাসায়নিক সার, কীটনাশক, অনিরাপদ জৈব সার প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত খাদ্যফসল অনিরাপদ হয়। পক্ষান্তরে ভৌত অবকাঠামোর অভাবে আধুনিক প্যাকেজিং করা সম্ভব হয় না বলে অনেক খাদ্য নিরাপদ হয়ে পড়ে।
এসব অপচয় রোধ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় মূল প্রবন্ধে যেসব সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করা হয় তা হলো-
- মানসম্মত শাক সবজি ও ফল উৎপাদনে “উত্তম কৃষি পদ্ধতি” (GAP) ব্যবহার সম্প্রসারিত করতে হবে।
- ফসল সংগ্রহের সময় কীটনাশকের “অপেক্ষমান সময়” (PHI) কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
- নিরাপদ শাক-সবজি ও ফল উৎপাদনে ’’নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন জোন” চিহ্নিত করে ফসল উৎপাদন করতে হবে।
- প্যাক-হাইজ স্থাপনের মাধ্যমে ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমিয়ে নিরাপদ মানসম্মত ফসল বাজারজাত করতে হবে।
- সঠিকভাবে এবং নিয়মে শাক সবজি ও ফলমূল পরিবহন করতে হবে।
- প্লাস্টিক ক্রেট ব্যবহার বৃদ্ধি করা হলে ১৮-২০% সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হ্রাস পাবে। তাই প্লাস্টিক ক্রেট ব্যবহার বাড়াতে হবে।
- MRL সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সংক্রান্ত রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পাদনের জন্য এক্রিডেটেড ল্যাবরেটরি স্থাপন করা ব্যবস্থা নিতে হবে।