ইফরান আল রাফি : কৃষিখাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমানে শিক্ষিত বেকারদের কৃষিখাতে অংশগ্রহণ বেকারত্ব নিরসনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেমনি ভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এমনই এক শিক্ষিত উদ্যমী তরুন ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মো. হায়দার আলী খান। যিনি নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবকদের অনুকরণীয় ও আর্দশ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
মো. হায়দার আলী খানের সফলতার গল্প ত্যাগ ও কষ্টে গাঁথা। ডিপ্লোমা পাশ করার পর নেমে পড়েন চাকরির সন্ধানে।অনেক চেষ্টার পর যখন চাকুরীর কোনো সন্ধান পেলেন না। চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই কিছু করার চিন্তা করলেন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পরামর্শ নিলেন কি করা যায়! অনেকেই তাকে মুরগির তাকে মুরগির খামার করার কথা বল্লেন। তার কাছেও আইডিয়াটা পছন্দ হয়ে গেলো।
তাই ২০০৫ সনে নিজের কষ্ট অর্জিত দশ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন ব্রয়লার মুরগি পালন। দেশে খামার করার কিছুদিন পর তিনি কর্মের সন্ধানে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মালয়েশিয়া গিয়েও তিনি কৃষি কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন শাকসবজি চাষ এবং ধীরে ধীরে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে হায়দার আলীর। এর কিছুদিন পর পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি।
নিজের কষ্টার্জিত অর্থায়নে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হায়দার নিজের পৈত্রিক নিবাস ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে ঘরে তুলেন ‘ওশান এগ্রো ফার্ম লিমিটেড”। ২০১৪ সালে ৮৬ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় সাত একর জমির উপর গড়ে তুলেন মাছ, পোল্ট্রি ও ডেইরি খামার। এক বছরের ব্যবধানে তিনি আয় করেন ২২ লক্ষ টাকা। বর্তমানে তাঁর খামারে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছে। তাঁর খামারে দেশীয় প্রজাতির রুই কাতলা, সরপুঁটি, মৃগেল ও শিং এর পাশাপাশি মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছও চাষ করছেন।
উল্লেখ্য, তিনি সমন্বিত পদ্ধতিতে মৎস খামারে দেশীয় প্রজাতির কয়েক হাজার হাঁস পালন করছেন। খামার সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. হায়দার আলী খান জানান, “বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের জন্য কৃষি পেশা একটি সম্ভাবনাময় খাত এবং চাকুরীর পিছনে না ছুটে শিক্ষিত তরুণদের উদ্যোক্তা হতে কৃষি খাত উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখে যার ধারাবাহিকতায় কৃষি ব্যবসায় আমার পথ চলা”। এ খাতের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ খাতের বড় সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুত সরবারহ। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় পরিবহণ খরচ বেড়ে যায় এবং বিদ্যুতের অভাবে মৎস খামারে পানি দিতে বিলম্ব হয় ফলে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এছাড়া পোল্ট্রিতে আলো ও বাতাস সরবারহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে বিদ্যুৎ আবশ্যক যার ঘাটতি হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়”। উল্লেখ্য, বর্তমানে মো. হায়দার আলী খানের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এলাকার অনেক বেকার তরুণ। এলাকার বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।