রবিবার , নভেম্বর ২৪ ২০২৪

পানির জন্য হাহাকার! কর্মকর্তারা কোটি টাকার ওয়াসা নাইট আয়োজনে ব্যস্ত

চট্টগ্রাম সংবাদাতা: গ্রীস্মকাল শুরুর প্রাক্কালে পুরো চট্টগ্রাম নগর জুড়ে পানির জন্য হাহাকার হলেও চট্টগ্রাম ওয়াসার সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যস্ত ওয়াসার ঠিকাদারদের অর্থায়নে আয়োজিত কোটি টাকার ওয়াসা নাইট আয়োজনে। নগরবাসীর অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এ ধরনের আচরনকে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মতো প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় সেবা সংস্থার এ ধরনের গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ। রাষ্ট্রীয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসা, কর্নফুলী গ্যাস কোম্পানী, হাসপাতালসহ সর্বত্রই ঠিকাদাররাই অঘোষিতভাবে প্রশাসন পরিচালনা করে থাকেন।

ঠিকাদারদের অর্থায়নে যেরকম কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে থাকে, ঠিক একই ভাবে যাবতীয় নীতি ও পরিকল্পনা তাদের ইচ্ছানুসারে হয়ে আসছে। সেকারণে জনস্বার্থ বারবার ভুলন্ঠিত হচ্ছে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এ সমস্ত রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের কর্মকান্ডের কারণে দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সুদৃর পরাহুত হচ্ছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার কোটি টাকার ওয়াসা নাইট আয়োজনের বিষয়ে এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া, ঠিকাদারদের অর্থায়নে এ ধরনের আয়োজন শুধুমাত্র অনৈতিক নয়, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ক্ষমতাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের সামিল। কারণ যাবতীয় নীতি ও পরিকল্পনা ওয়াসা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হবার কথা। যদি অনুমোদনের প্রয়োজন না পড়ে তাহলে বর্তমান বোর্ড অকার্যকর ও তারা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম নয়। আর ওয়াসার তহবিলের কাছ থেকে যদি অর্থ ব্যয় না হয়ে থাকে তাহলে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। বিষয়টি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, চট্টগ্রাম নগর জুড়ে পানির জন্য হাহাকার, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করছেন না। পানি সংকটের কারণে সর্বত্রই টিউবওয়েল স্থাপন যেরকম প্রকট আকারে বেড়েছে, তেমনি ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রচন্ড হারে। তারপরও নগরবাসীর জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের একটি বড় অংশে এখনও পানির জন্য হাহাকার।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখনই পানির সংকট দেখা দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বারংবার বিভিন্ন প্রকল্পের দোহাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর তাদের সেই প্রতিশ্রুতির কোনো ফল নগরবাসী পায় না। এর মূল কারণ হলো পানির অপচয় রোধ, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি, লিকেজ, পানির চুরি বন্ধ, বিলিং ব্যবস্থার ত্রুটি দূর না করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বারংবার নতুন নতুন প্রকল্পের উপর জোর দিয়ে আসছে। ফলে ওয়াসা তলাবিহীন জুড়ির ন্যায়, যা-ই ঢালা হচ্ছে সবই খালে গিয়ে পড়ছে।

ক্যাব পানির অপচয় রোধ, সেবা সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা রোধে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রাহক সেবার মান ও অনিয়ম রোধে ত্রিপাক্ষিক গণশুণানীর আয়োজন করা, গ্রাহক হয়রানি রোধে তাৎক্ষনিক প্রতিকারের জন্য ডিজিটাল হেলপ লাইন চালু ও হেলপ ডেস্ক আধুনিকায়ন, দাম বাড়ানোসহ সেবার মান উন্নয়নে নীতিমালা প্রণয়নে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরার দাবি জানালেও মন্ত্রণালয় ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যা বর্তমান আধুনিক বিশ্বে সুশাসন ও ন্যায্য ব্যবসার পরিপন্থি এবং একটি আদর্শ সেবা সংস্থার মডেলের পরিপন্থী বলে নেতৃবৃন্দ মনে করেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

 

This post has already been read 2419 times!

Check Also

ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভ্যাব) এর বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামলীগের বিদায়ের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে …