ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) :বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের পুকুর খনন প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই দায়সারাভাবে এই প্রকল্পের কাজ চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ । ২ টি পুকুর খনন কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট দূরীকরণের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে শরণখোলা উপজেলার ৪ ইউনিয়নে পানি সংরক্ষণের জন্য ১২টি পুকুর পুনঃ খননের দায়িত্ব পান খুলনা ও গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস.টি এন্ড এস.এস কনস্ট্রাকশন, এম.এস শেখ এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। যার খনন ব্যয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সম্প্রতি কদমতলা তালুকদার বাড়ী সরকারী পুকুর পুনঃখননের কাজের অগ্রগতি দেখেতে গেলে সেখানে শ্রমিক ছাড়া সংশ্লিষ্টদের কাউকেই দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলী তালুকদার বলেন, এরকম পুকুর কাটা আমি কোন দিনও দেখিনি। একবার বৃষ্টি হলেই পাড় ভেঙ্গে পুকুরটি আগের মত ভরে যাবে। তাছাড়া এই কাজের নিয়ম কানুন কি আছে তা আমরা কেউ জানিনা। দক্ষিণ সাউথখালী সরকারী পুকুরের জমি দাতা ডা. জাহাঙ্গীর আলম খাঁন, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক হাওলাদার, ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, আমাদের পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা মতে, সরকারি পুকুর খননে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি কমিটি করতে হয় এবং কাজের নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ উক্ত কমিটিকে অবহিত করে কাজের শেষে ওই পুকুর কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু এখানে কোন কমিটি হয়নি, দায়সারা ভাবে পুকুরের সামান্য মাটি কেটে শুধু পাড় বাঁধা হয়েছে। পুকুরের পাড়ে কোন ইটের রাস্তা ও গেইট নেই, সীমানা পিলার বসানো হলেও গোড়ায় ঢালাই নেই, দায়সারা কাটা তারের বেড়া, পিএসএফ, টেংকি কোনটাই নেই। পুকুরের চারপাশে বনায়নের জন্য দু-চারটি গাছের চার রোপণ করা হলেও তা ইতোমধ্যে অধিকাংশ মরে গেছে।
এছাড়া পুকুরটি খনন তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ওই দপ্তরের মেকানিক মো. রাজিব হোসেন ও মেশিনম্যান মো. জয়নাল আবেদীনকে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। বগী পঞ্চায়েত বাড়ী সরকারী পুকুরের সুবিধাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন পঞ্চায়েত ও রুস্তুম আলী খাঁন বলেন, উন্নয়নের সরকারের আমলে সরকারী অর্থ লুটপাট অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। আমরা কাজের স্টিমিট চেয়েছি কিন্তু সংশ্লিষ্টরা দেয়নি। পুকুরের চর্তুপাশ কেটে ছেটে পরিষ্কার করে খনন কাজ চালাচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। অপরদিকে জেলা পরিষদের সরকারি পুকুর চুরির পাশাপাশী খননকালে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ টাকার গাছ লুন্ঠনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ, ওই দপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচের মাধ্যমে ম্যানেজ করে গাছ কেটে নেয়। সরকারি সম্পদ এভাবে হরিলুট হওয়ায় সচেতন মহলে এনিয়ে অনেকটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিয়মানুযায়ী পুকুরের চারদিকের গাছগুলো জেলা পরিষদের অনুমতি ছাড়া কেউ কাটতে পারবে না।
এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকালে কোনো গাছ কাটার প্রয়োজন হলে তা খুলনা ও গোপালগঞ্জের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুরের চতুর পার্শ্বে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ টাকার গাছ কেটে নে কেটে জেলা পরিষদকে বুঝিয়ে দেয়ার বিধান থাকলেও বাস্তবে এর চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। উপজেলার কোথাও কেটে ফেলা গাছগুলো সংরক্ষণে নেই। শরনখোলার বগী এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন পঞ্চায়েত বলেন, আমি উপজেলার অফিস ও ঠিকাদারকে বলে ২/৩ টি গাছ কেটে নিয়েছি। এ ব্যাপারে একই এলাকার এক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে লোপাট হয়েছে। এতে বহু টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। শুনেছি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী আবু হানিফ কর্মকর্তাদের নামে ঘুষ নিয়ে গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কর্তনের খবর শুনেছি। আমরা কাউকে অনুমতি দেইনি। এছাড়া ওই গাছগুলোর মালিক জেলা পরিষদ। আমরা তাদেরকে অবহিত করেছি।আমার দপ্তরের কেউ অনিয়মের সাথে জড়িত নেই। এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন,