মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর প্রতিনিধি): প্রত্যেক দিবসের পেছনে কোন না কোন ঘটনা বা ইতিহাস থাকে। ১৩ই জুন কবুতর দিবস এর পেছনেও রয়েছে সেরকম ঘটনাবহুল ইতিহাস। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত্রুপক্ষ এবং মিত্রপক্ষ উভয়েই ব্যাপকহারে রেসার হোমা কবুতর ব্যবহার করেছে। তখন ছিলোনা মোবাইল ফোন, ডাক ব্যবস্থাও তেমন গতিশীল ছিলনা, ছিলোনা ওয়াকি-টকির মতো কোন প্রযুক্তি। তাই নির্ভরযোগ্য ও অল্পসময়ে বার্তা প্রেরণের একমাত্র ভরসা ছিল কবুতর।
তাছাড়া দুর্গম, বরফ আচ্ছাদিত ও পাহাড়ী এলাকায় বার্তা পাঠানোর জন্য কবুতরের বিকল্প কিছু ছিলোনা। একমাত্র উপায় ছিল কবুতর। যুদ্ধ চলাকালীন কবুতরগুলো চিঠি, ঔষধ এমনকি বোমাও বহন করত । এ কবুতরগুলো ছিলো সেনাবাহিনী কর্তৃক বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, একেক কবুতর একেক কাজে ব্যবহৃত হতো। মজার বিষয় হলো কবুতরগুলির সেনাবাহিনীর মত কর্ণেল , কমান্ডো , ক্যাপ্টেন , মার্শাল প্রভৃতি Rank ও ছিল। আর এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নামতো ছিলোই।
যেমন- The Mocker, GI Joe, Kaiser, Cher Ami, Gustav, William Of Orange ইত্যাদি। The Mocker নামের কবুতরটি যুদ্ধে আহত হওয়ার আগ পর্যন্ত মোট ৫২ টি মিশন সম্পন্ন করেছিল। যুদ্ধ শেষে স্বীকৃতিস্বরুপ The Mocker ও তার সাথের ৩২ টি কবুতরকে Commando উপাধি ও Dickin মেডেল দেওয়া হয়েছিল । Cher Ami নামের কবুতরটি বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একবার ২০০ জন সেনার জীবন রক্ষা করেছিল। সেনা সদস্যরা দুর্গম বরফাচ্ছন্ন এলাকায় পথ ভুল করে শত্রুদের ক্যাম্পের খুব কাছে চলে গিয়েছিল। যখন দিক নির্দেশনা নিয়ে তাদের খটকা লাগে , বরফাচ্ছন্ন এলাকায় সূর্য এমনিতেই দেখা যায় না। তখন তারা তাদের সাথে থাকা কবুতরটি ছেড়ে দেয় , কবুতরটি নিজ ক্যাম্পের দিকে উড়ে যায় এবং তাকে অনুসরন করে সেনা সদস্যরা নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসে। ফিরে এসে মানচিত্র নিয়ে তারা ফিরে আসার দূরত্ব ও কোণ পরিমাপ করে বুঝতে পারে, শত্রু ক্যাম্পর খুব নিকটে তারা পথ ভুল করে চলে গিয়েছিল। তাদের সকলের মৃত্যু একেবারে নিশ্চিত ছিল।
এরপর একটি মিশনে Cher Ami কবুতরটি মারাত্মক আহত হয়, সে একটি পা ও একটি চোখ হারিয়েও ক্যাম্পে ফিরে আসে। যুদ্ধ শেষ হয়। সরকার এই সাহসী কবুতরগুলোকে ‘Commando’ উপাধি দেয় এবং সম্মান স্বরূপ Dickin মেডেল দেওয়া হয়। শুধু কবুতর নয়, সেসময় আরো বেশকিছু পোষা প্রাণিও এই পুরস্কার অর্জন করে। পরবর্তীততে ১৯১৯ সালের ১৩ ই জুন Cher Ami নামের কবুতরটি মারা যায়। Cher Ami মারা যাওয়ার ৮৯ বছর পর আমেরিকার new York Bird Club এর প্রতিষ্ঠাতা Anna Dove New York Times পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি পোষা পাখি হিসেবে কবুতরের ব্যাপক প্রসার ও Cher Ami র মহান কৃতিত্বের জন্য ১৩ ই জুন কে বিশ্ব কবুতর দিবস হিসেবে পালনের জন্য দাবি পেশ করেন।
সেসময় তার দাবি সকলেই গ্রহণ করে নেয়। প্রথমদিকে অল্প পরিসরে পালন হয় কবুতর দিবস। সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য দেশের কবুতর প্রেমীরা ১৩ ই জুনকে কবুতর দিবস রূপে পালনে আগ্রহী হয়ে উঠে। শুরু হয় বিশ্বব্যাপী কবুতরদিবস পালন। এভাবেই বিশ্ববাসী ১৩ ই জুন কবুতর দিবস পালন করে আসছে । বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে ১৩ ই জুন কবুতর দিবস পালনকে কেন্দ্র করে এ দিনটি কবুতর প্রেমীদের সবার স্বপ্ন পালনের দিন হয়ে উঠেছে।