ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশেষ দিক চিংড়ি চাষ ও রপ্তানি। অপরিকল্পিত চিংড়িচাষ করার পরিবর্তে পরিকল্পিত চাষ ও জলাশয়ের প্রকৃত মালিকদের মাধ্যমে মাছচাষ নিশ্চিত করতে অতীতের ন্যায় চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মনে রাখতে হবে, জমি যার ঘের তার। অবৈধভাবে চলমান খালকে বদ্ধ জলাশয়ে রূপান্তর করে আমরাই আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করেছি। সুন্দরবনের মধ্যে প্রায় তিন হাজার খাল রয়েছে। বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ফলে সকল প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মৎস্য সেক্টরের সমৃদ্ধি, সুনীল অর্থনীতির অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, নৌবাহিনীর তত্বাবধানে ৫৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন এলাকার ৮৩টি খাল সংস্কার করা হচ্ছে। খুলনার ময়ুর নদীর সাথে যুক্ত ২২টি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সৎ, যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই দেশের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।
এর আগে সিটি মেয়র নগরীর শহিদ হাদিস পার্ক পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন এবং মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালিতে নেতৃত্বে দেন। র্যালিটি শহিদ হাদিস পার্ক থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। র্যালিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের জিডিপির ৩.৫৭ শতাংশ, মোট কৃষিজ উৎপাদনের ২৫ শতাংশ ও প্রাণিজ আমিষের ৬০ শতাংশ মৎস্যখাত যোগান দিচ্ছে। দেশের ১১ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সাথে জড়িত। বর্তমানে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদানে উদ্বৃত্ত। দেশে দৈনিক মাথাপিছু ৬০ গ্রাম মাছের চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫০ গ্রাম সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে তৃতীয়, বদ্ধ পানিতে মাছচাষে পঞ্চম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে বাংলাদেশ ৭৩ হাজার একশত ৭১ মেট্রিক টন মৎস্যজাত দ্রব্য রপ্তানি করে চার হাজার দুইশত ৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। ২০১৮ সালে খুলনা জেলায় মাছের উৎপাদন ছিল ৬২ হাজার দুইশত ২৯ মেট্রিক টন যা চাহিদার তুলনায় ছয় হাজার সাতশত ৬৭ মেট্রিক টন বেশি।
খুলনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক রণজিৎ কুমার পাল, কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার এসএম ফজলুর রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জানান মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ। অনুষ্ঠানে মৎস্যচাষী সমিতি, মৎস্যজীবি সমিতি ও মৎস্য খাদ্য বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।