বাংলাদেশের খামারিরাও অত্যন্ত পরিশ্রমী। কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে পারলে এদেশের পোল্ট্রি খাতের জন্যও উজ্জল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রামের আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং পাম নেদারল্যান্ডস সিনিয়র এক্সপার্টস আয়োজিত পোল্ট্রি খামার ব্যবস্থাপনা ও জীবনিরাপত্তা শীর্ষক প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডাচ পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ মি. লিও ভ্যান দে ভেলদে।
ভেলদে বলেন, নেদারল্যান্ডস অত্যন্ত ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষিপণ্য এবং ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় পোল্ট্রি রপ্তানিকারক দেশ। এটি সম্ভব হয়েছে কারণ, আমাদের কৃষক ও খামারিরা অত্যন্ত শিক্ষিত, পরিশ্রমী এবং কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন। সরকারি সংস্থাগুলো খুবই দ্রুততার সাথে সেবাদানে এগিয়ে আসে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে এদেশের সাধারন মানুষ। অর্থনৈতিক এ অগ্রযাত্রায় মানুষের সুস্থতা এবং সেই সাথে দরকার পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য।
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা তখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব যখন জ্ঞান ও মেধার বিচারে নিজেদের মর্যাদা সমুন্নত করতে পারবো। দেশ টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা তাই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, এদেশের পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তারা ভোক্তাদেরকে নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংসের নিশ্চয়তা দিতে চায়। সে কারণেই বিপিআইসিসি’র উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের দরকার একটি দক্ষ রিসোর্স পুল, যারা প্রান্তিক খামারিদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। মূলত: সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত টেকনিক্যাল ট্রেইনারদের মাস্টার ট্রেইনার তৈরি প্রথম ধাপ হিসেবে আজকের এই প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
টুটুল জানান, চট্টগ্রামের পর সাভার, গাজীপুর এবং রংপুরে ধারাবাহিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ ধরনের কর্মশালা আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য তিনি নেদারল্যান্ডস দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রিয়াজুল হক বলেন, প্রাণিজ প্রোটিনের এখন সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে পোল্ট্রি। সবচেয়ে কম জমি ব্যবহার করে স্বল্পতম সময়ে যে পরিমান খাদ্য উৎপাদন করা যায় তা অন্য কোন খাতে সম্ভব নয়। সরকার পোল্ট্রি রপ্তানির বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক। আর এ স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের দরকার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দক্ষ খামারি।
কর্মশালায় স্থানীয় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ.কে.এম সাইফুদ্দীন এবং অধ্যাপক ড. এস.কে.এম আজিজুল ইসলাম।
কাজী ফার্মস, আফতাব বহুমুখী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি, নারিশ পোল্ট্রি, নাহার এগ্রো, কোয়ালিটি ফিডস, এজি এগ্রো, রেনাটা, হিমাচল ফার্মস, প্রগ্রেসিভ হ্যাচারি, প্রভৃতি কোম্পানীর টেকনিক্যাল ট্রেইনার ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তাগণ ছাড়াও থানা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ মোট ৩১জন প্রশিক্ষণার্থী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষ অংশগ্রহণকারিদের হাতে সনদপত্র তুলে দেয়া হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিপিআইসিসি’র সচিব দেবাশিস নাগ, যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং এক্সিকিউটিভ আবু বকর।