বাকৃবি প্রতিনিধি: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কতৃক প্রস্তাবিত নতুন অর্গানোগ্রামে ষড়যন্তমূলকভাবে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (LEO) পদ স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতি’ কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান এবং উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহম্মদ পিহান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলা পর্যায়ে উন্নতি করার পরিপ্রেক্ষিতে থানালেভেলে TLO পদটিকে আপগ্রেডেশন করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা(ULO)পদে উন্নীত করা হয়। কিন্তু উপজেলা এন্ট্রি লেভেলে পশুপালন গ্রাজুয়েটদের জন্য আলাদা কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। দীর্ঘদিন পর বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার সার্ভিসে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (LEO)পদ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিগত ৪-৫ বছর যাবত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তার অর্গানোগ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একটি যুগপযোগী অর্গানোগ্রামের খসড়া তৈরি করে তা বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে উক্ত অর্গানোগ্রাম যাচাই বাছাই করে ৩০ অক্টোবর,২০১৮ সালে ০৫.১৫৭.০২.০৩.০৩৬.২০১১ ৩য় খন্ড ২২৮ প্রকাশ করে। যেখানে এন্ট্রি লেভেলে LEO পদটি বহাল রেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে পরিলক্ষিত করা যায় যে, গত ১০ সেপ্টেম্বর,২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে অর্গানোগ্রামটি প্রকাশিত হয় সেখানে একদল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ মদদে উক্ত পদটি প্রস্তাবনায় বাদ পড়ে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই সিদ্ধান্তটি প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের অন্তরায় এবং তা প্রাণিসম্পদ কে ধবংসের দিকে ধাবিত করবে। আমরা সচেতন ছাত্রসমাজ হিসেবে তা কখনোই মেনে নিতে পারি না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ শস্যখাতে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করলেও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে যা বাংলাদেশের ২০২১ এবং ২০৪১ এর ভিশন বাস্তবায়নের অন্তরায়। প্রানিসম্পদের এই স্থবিরতার প্রধান কারণ হিসেবে পশুপালন এবং পশু চিকিৎসার মধ্যবর্তী অন্তঃকোন্দল-ই প্রধান কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পশুপালন ও পশুচিকিৎসা পেশার জন্য স্বতন্ত্র দুটো অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করাই এই সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান বলে আমরা মনে করি।
বক্তারা বলেন, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরণকৃত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয় LEO পদটি পুনরায় সংযোজন না করা পর্যন্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী অন্তঃকোন্দল সমাধানের লক্ষ্যে সরকারে্র সর্বোচ্চ মহল থেকে উদ্যোগ গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। ইতিমধ্যেই পশুপালন অনুষদের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীরা LEO পোস্ট পুনর্বহাল এবং ডাইরেক্টর পৃথকীকরণ এই দুই দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং পশুপালন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দও এতে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। উক্ত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সময় পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরো বেগবান হবে।
অতএব, দেশের প্রাণিজ সম্পদের উন্নয়নে পশুপালন গ্রাজুয়েটদের অপরিহার্যতা অনুধাবন করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে LEO পদ পুনর্বহাল করে এবং আলাদা ডাইরেক্টর প্রতিষ্ঠা করে পশুপালন গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেশকে প্রানিসম্পদ তথা দুধ ,ডিম এবং মাংসজাত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা দেশের মানুষ তথা সরকারে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে অবহিত করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।