ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : দেশের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে খুলনা অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ধসে পড়ে বসবাসের অযোগ্য হয়েছে কয়েক হাজার। কৃষি, মৎস্য খাতে ব্যাপক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন, মিটার, ফিডারসহ নানান যন্ত্রপাতি। গ্রাম্য রাস্তাঘাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। ঝড়ের কবলে পড়ে খুলনায় মারা গেছেন ২ জন। উপকূলীয় জনপদে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করছেন। গত শনিবার মধ্যরাতে খুলনা উপকূলে আঘাত হনে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ভেঙে পড়া গাছ গাছড়া সরিয়ে নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু তান্ডবে বিধ্বস্থ বাড়িঘরে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। অনেকে বাড়ি ফিরে গেলেও বসবাস করা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন নিজেরা এখন ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, পুকুর সংস্কারের চেষ্টা করছেন।
মাছ ও চিংড়িতে ক্ষতি: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে মাছ ও চিংড়িতে ৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মাছের ক্ষতি হয়েছে ৪৭৭ মেট্রিক টন, চিংড়িতে ক্ষতি ১ হাজার ২৯০ দশমিক শূন্য ৭ মেট্রিক টন। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর ও দিঘীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৫টি, ঘেরের সংখ্যা ২ হাজার ৭৭২টি। পুকুরের আয়তন ৫৩৭ দশমিক ৫০ হেক্টর ও ঘেরের আয়তন ১ হাজার ৩৫১ হেক্টর। এছাড়া ২০ লাখ পোনার ক্ষতি হয়েছে। খুলনা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন এ তথ্য জানিয়েছেন।
কৃষিতে ক্ষতি: কৃষি প্রধান বাংলাদেশে উপকূলীয় জেলা খুলনায় ব্যাপকভাবে আমনের আবাদ হয়। এবারও আবাদ হয়েছিল প্রায় ৯১ হাজার হেক্টর (১ হেক্টর= ২.৪৭ একর) জমিতে। যার মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ উপজেরায় আমনের আবাদ হয় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে।
এছাড়া সবজির আবাদ হয় প্রচুর জমিতে। বুলবুলের আঘোতে আমন ক্ষেতসহ সবজিতে ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ হাজার হেক্টর জমি। শীতকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৬৪ হেক্টর, পেঁপে ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ১০০ হেক্টর, কলা ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ৫২ হেক্টর, পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৬ হেক্টর, সরিষা ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ৪০ হেক্টর। সব মিলিয়ে কৃষিতে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকার মতো। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন।