ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : যশোরের যশ, খেজুরের রস’এই প্রবাদকে সত্য করে তুলতে ইতিমধ্যে বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মাগুরা জেলাজুড়ে প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে খেজুরের গুড়-পাটালি তৈরির মহাউৎসব। বাড়িতে বাড়িতে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা পায়েসসহ নাম না জানা হরেক রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম পড়েছে। তাই শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে গাছিরা একদিকে ব্যাস্ত হয়ে খেজুর গাছ খিলি দিতে অন্যদিকে ব্যাস্ত মৌসুম শুরুর সময়ের চাঁচ দেওয়া গাছের রস দিয়ে গুর পাটালি তৈরিতে।
প্রতিবছর গাছিরা ধারালো দা দিয়ে প্রথমে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করে থাকে, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। চাঁচ দেওয়ার সপ্তাহখানেক পর নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয় সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ। প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশার চাদর জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। এই মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের মিষ্টি তত বাড়বে।
গ্রামীণ জনপদে শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দিনের শুরুতে শীতের সকালে খেজুরের রস, সন্ধ্যা রস ও সুস্বাদু গুড়-পাটালি। আর এই যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়-পাটালির মৌসুম শুরু হওয়ার ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড়-পাটালি তৈরির শপথ নিয়েছেন গাছিরা।
বৃহত্তর যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়-পাটালির সারা দেশে সুনাম রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এবং বিখ্যাত খেজুরের গুড়-পাটালির সুনাম ধরে রাখতে এগিয়ে এসেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। তাঁর উদ্যোগে গাছিদের ভেজালমুক্ত গুড়-পাটালি তৈরির শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
গাছিদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়-পাটালির সারা দেশে সুনাম রয়েছে। সেই সুযোগে গাছিদের মধ্যে অনেকে অধিক লাভের আশায় পাটালিতে চিনিসহ বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে কিছু অসাধু মানুষ ভেজাল গুর তৈরি করেন। ইতিমধ্যে খেজুর গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয়েছে। খেজুর গুড় তৈরিতে ভেজালের অভিযোগ পেলেই এবার অভিযান চালানো হবে। ভেজালের সত্যতা পেলে যে টাকা জরিমানা করা হবে, তাতে লাভ-আসল দুটোই যাবে। সুতরাং যশোরের ঐতিহ্যবাহী এই গুড়-পাটালিতে কোনো ধরনের ভেজাল করবেন না। এ সময় জেলা প্রশাসকের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত গাছিরা দুই হাত তুলে ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড়-পাটালি উৎপাদনের শপথ নেন।
অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া গাছি সাইফুল ইসলাম বলেন, খেজুরের গুড়-পাটালি উৎপাদন খুব পরিশ্রমের কাজ। সেই তুলনায় আমরা ন্যায্য দাম পাই না। তবে গত বছর থেকে ‘কেনারহাট ডটকম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে গুড়-পাটালি কেনা শুরু করেছে। যে কারণে আমরা গত বছর থেকে একটু বেশি দাম পাচ্ছি। ন্যায্য দাম না পেয়ে আগে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভেজাল করতো। কিন্তু বেশি দাম পাওয়ার কারণে এখন আর খেজুরের গুর পাটালিতে ভেজাল মেশানো হয় না। আমরা খাঁটি গুড়-পাটালি তৈরি করি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, খেজুরের গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। যে কারণে গুড়-পাটালি উৎপাদনও প্রতি বছর কমছে। ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্যে বাঘারপাড়া উপজেলায় এক হাজার খেজুর গাছ সম্বলিত একটি পরিকল্পিত আদর্শ খেজুর গাছের বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই বাগানকে কেন্দ্র ‘খেজুর গুড়-পাটালির শিল্পাঞ্চল’গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য উদ্যোক্তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।