ফারুক আলম (লালমনিরহাট) : দেশের উত্তরবঙ্গের জেলা লালমনিরহাট। এ জেলারই ১৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলা আদিতমারি। উপজেলাটিতে বেশ কয়েক বছর ধরে ঘটে যাচেছ নীরব এক বিপ্লব যা অনেকেরই অজানা। এখানে গড়ে উঠছে ছোট ছোট অসংখ্য দুধেল গাভির খামার। এ অঞ্চলের সব খামারকে ছোট না বলে অনেকটা ঘরোয়া খামার বললেই হয়তো বেশি মানানসই হবে।
আদিতমারী উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই এসব ঘরোয়া খামার লক্ষ্য করা গেছে। কেউ অনেকটা শখের বসে, কেউবা পরিবারের প্রতিদিনকার বাজার-সদাই থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ পর্যন্ত চালাচ্ছেন এমন সব খামারের মাধ্যমে। যারা শখের বসে একটা-দুটা দুধেল গাভি কিনেছিলেন শুধুমাত্র বাড়ির আঙ্গিনার শোভা কিংবা পরিবারের দুধের খরচ চালাবার জন্য, তারাও এখন আর এসব খামার থেকে মুখ ফেরাতে নারাজ। শখ থেকে তারা বরং হয়ে যাচ্ছেন পেশাদার খামারি। এসব খামারির তালিকায় বাদ নেই অন্য যে কোন পেশার মানুষের নাম। সরকারি-বেসরকারি চাকুরে থেকে শুরু করে বাদ নেই ছাত্র এবং গৃহিণীরাও। তারা সবাই তাদের নবদিগন্তে আলোর ঝলকে তাদের তাদের স্বপ্ন দেখছেন। বুনে চলেছেন স্বপ্ন।
আদিতমারী সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে আব্দুর রাজ্জাক আজ থেকে ৩ বছর আগে একটি বকনা বাছুর সহ দুধেল গাভি কেনেন। তার এখন গাভির সংখ্যা দুইটি এবং ষাঁড় রয়েছে তিনটি। তিনি এখনো প্রতিদিন ১৫ লিটার দুধ বাজারজাত করে আসছেন। তার এই ছোট খামারটি নিয়ে দেখছেন তিনি বাস্তবের নিরিক্ষে রঙিন স্বপ্ন।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের সঙ্গেই ফাতেমা বেগমের ৪টি গরু নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি খামার। তিনি জানান আরো মোট পাঁচটি দুধেল গাভি তার খামারে যুক্ত হবার পরে, গরু মোটাতাজাকরনের দিকে এগিয়ে যাবেন তিনি।
বলেছিলাম স্বপ্নের কথা। সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় গড়ে ৭৬জন খামারির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আদিতমারী খামারি সমিতি। এ সমিতির খামারিরা মূলত গাভি পালন করে থাকেন। অল্প সংখ্যক খামারি গরুমোটাতাজা করার সাথে জড়িত।
সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান বাবুলের কথায় জানা যায়, এসব খামারি মূলত প্রান্তিক খামারির মতো করে, অনেকটা সাধাসিধে ব্যবস্থাপনায় খামার করে আসছেন। যদিও তারা যথেষ্ট আধুনিক,কিন্তু তাদের খামারে নেই কোন আধুনিক বৈজ্ঞানিকতার ছোঁয়া। যদি এসব খামারি আধুনিক চিকিৎসাসেবা এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিতি ঘটিয়ে, খামারকে আধুনিকায়ন করতে পারে, তাহলে এখনকার চেয়ে দিগুণ লাভের মুখ দেখতে পারবেন –বলে জানান তিনি।
এই সমিতি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের অঞ্চলে দুধ বাজারজাত করাটা একটা বড় রকমের বিড়ম্বনার কাজ। আদিতমারী উপজেলার নতুন লাইভস্টক অফিসার মোশারফ হোসেন আসার পরে একটি সমিতি করার তাগিদ দেন। তিনি জানান, সমিতি করলে দুধ বাজারজাত করার সুবিধের কথা।
কিন্তু সমিতি করার ৫/৭ মাস হয়ে গেলেও তেমন কোন উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। প্রথম দিন এই ৭৬ জন খামারিকে নিয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসে মিটিং ডাকার পরে, সারাদিন আসছি আসছি বলেও একবারও তিনি আসেননি। তিনি যে মিল্কভিটা, আড়ং এর মতো প্রতিষ্ঠানে দুধ বাজারজাত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা যদি সত্যি সত্যি কোন একদিন বাস্তবে হয়, তাহলে রুপকথার গল্পের মত পাল্টে যাবে আদিতমারী উপজেলার গাভি পালনের চিত্র এবং গড়ে উঠবে আরো বড় বড় খামার।