শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

শত্রুতার জেরে বর্গাচাষির হাজারো মরিচ গাছ উপড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

ছবি: বর্গাচাষি ইসরাইল হোসেন (৪৫) (উপরে) এবং নিচে তার স্ত্রী আনোয়ার বেগম। পাশে উপড়ানো মরিচ গাছ স্বর্নামতি সতি নদীর তীরে ফেলে রাখা হয়েছে।

মো. ফারুক আলম (লালমনিরহাট) : লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায় শত্রুতার জেরে ইসরাইল হোসেন (৪৫) নামে এক বর্গাচাষির এক হাজার ৮শ’ মরিচ গাছ উপড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে আদিতমারী থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন  ইসরাইল হোসেন। ক্ষতিমুখে পড়া ইসরাইল হোসেন অাদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের আরাজি দেওডোবা গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ভূমিহীন ইসরাইল হোসেন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে তিন সন্তানের লেখাপড়াসহ ৫ সদস্যের সংসার চালিয়ে আসছেন। ৩ বছর আগে সঞ্চিত অর্থের ২০ হাজার টাকায় স্থানীয় আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুর রহিম শিমুলের ১৩ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করছেন। হঠাৎ সেই জমির মালিকানা দাবি করে ফসল নষ্ট করার হুমকি দেন পাশের টেপাটারী গ্রামের কাসেম প্রধানের ছেলে আলা উদ্দিন, জালাল উদ্দিন ও জয়নাল।

প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে ওই ১৩ শতাংশ জমিতে এক হাজার ৮শ’টি মরিচ চারা রোপন করেন বর্গাচাষি ইসরাইল। নিজ সন্তানের মত করে বড় করেছেন মরিচ গাছ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে মরিচ ক্ষেত। তিনি আশা করছিলেন, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই  মরিচ বাজারজাত করতে পারবেন। কিন্তু হঠাৎ বুধবার(১১ ডিসেম্বর) রাতে সেই ক্ষেতের সবগুলো মরিচ গাছ তুলে পাশের স্বর্নামতি সতি নদীতে ফেলে দিয়েছেন দুষ্টচক্রের দল। বৃহস্পতিবার সকালে গাছ শূণ্য ক্ষেত দেখে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, তারপর তিনি কিছু গাছসহ থানায় হাজির হয়ে থানায় অভিযোগ করেন ইসরাইল হোসেন।

এ নির্মম ঘটনার বিচার চেয়ে আদিতমারী থানায় আলা উদ্দিন, জালাল উদ্দিন ও জয়নালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ইসরাইল হোসেন।

ইসরাইল হোসেন বলেন, গত তিন বছর ওই জমি চাষাবাদ করছি। গত বছর প্রায় ১ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছিলাম। এবারো আশা করেছিলাম লক্ষাধিক টাকা আয় হতো মরিচ ক্ষেত থেকে। কিন্তু আলাউদ্দিন গং গাছগুলো তুলে নদীতে ফেলে দিয়েছে। ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় নেই।

ইসরাইলের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে থাকেন, গাছগুলো নিজ সন্তানের মতো করে বড় করেছি। সকালে দেখি সেই সন্তান মতো গাছগুলো তুলে ফেলে দিয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে শত্রুরা। তিনি এর প্রতিকার দাবি করেন।

ওই গ্রামের সাবেক ইউপি  সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, গরিব চাষির মরিচ ক্ষেতের সাথে শত্রুতা করা ঠিক হয়নি। জমি পেলে আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত ছিল। যারা এ কাজ করেছেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে, দাবি করেন নজরুল।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাইফুল ইসলাম  বলেন, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করা চরম অমানবিক। অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

This post has already been read 4937 times!

Check Also

মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি ও সুষম সার ব্যবহার বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

পাবনা সংবাদদাতা: পাবনা’র ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মৃত্তিকা সম্পদের যৌক্তিক ও লাভজনক ব্যবহার, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি …