নিজস্ব প্রতিবেদক: প্লাণ্ট ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিকস সোসাইটি অব বাংলাদেশ (PBGSB) এর ১১তম দ্বিবার্ষিক কনফারেন্স শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওতে অবস্থিত এসিআই সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কনফারেন্স এর শুরুতে পরলোকগত ব্রিডারদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয় এবং এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিবিজিএসবি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মো. শহীদূর রশীদ ভূঁইয়া, জিপিবি, এসএইউ।
অধ্যাপক ড. মো. শহীদূর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, সাধারণভাবে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের যে সাফল্য দেখা যায় সেটির অন্তরালে মূল কাজটি করেন ব্রিডাররা। কারণ, ব্রিডাররা নিত্য নিতুন জাত উদ্ভাবন না করলে এসব সম্ভব হতো না। কিন্তু সেই ব্রিডাররা আজ অবহেলিত, অথচ ব্রিডাররা মূল্যায়িত না হলে একটি জাতিকে সাফার করতে হয়।
অধ্যাপক ভূঁইয়া বলেন, খাদ্য বলতে দানাদার শস্য, দুধ, মাংস, মাছ সবকিছুকেই বুঝায়। কিন্তু আমরা সহজে বলে ফেলি খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা বলতে চাইনা, খাদ্য বলতে প্রকৃতার্থে যা বুঝায় সেটিতে ঘাটতি আছে এবং সেখানে আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ফসল উৎপাদন বাড়ার মূল কারণ হাইব্রিড। কিন্তু এসব হাইব্রিড ফসলের বেশিরভাগ বীজ বিদেশে থেকে আমদানি করতে হয়। শুধু ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে চলবেনা, বীজ উৎপাদনেও আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। এজন্য কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিজ্ঞানীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করিনা, ব্রিডারদের কোন অবসর বয়সসীমা আছে কিংবা তারা কেবল নয়টা-পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করবে। তাঁরা উদ্ভাবক, সৃষ্টির আনন্দ তাঁদের উপভোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, ফসলের শুধু নিত্যনতুন জাত উদ্ভাবন করলে চলবেনা। এক্ষেত্রে কৃষকের মনোজগত বুঝতে হবে যে, তারা কী চায়? প্রতিটি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কৃষকের চাহিদা ও লাভের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মাথায় রাখা দরকার।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি এবং এসিআই এগ্রিবিজনেস লি. -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. এফএইচ আনসারি বলেন, বিশ্বে ব্রিডিং টেকনোলজিতে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় দশগুণ। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে খুবই পিছিয়ে আছি। গবেষণার জন্য আমরা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারছিনা বিজ্ঞানীদের। সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।
ড. আনসারি বলেন, আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিক্যুলাম পরিবর্তন করা দরকার, সেখানে পড়ালেখার মান আরো বাড়াতে হবে। গবেষণা সেন্টারগুলোতে প্রচুর অর্থের যোগান দিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা এমেরিটাস এবং স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী কৃষিবিদ ড. এম. বদরুদ্দোজা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠার পেছনের গল্প শোনান এবং সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র এবং জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ব্রিডিং প্রফেশনালদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়।