শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

অকাল বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাঁদপুরের আলু চাষিরা 

ছবি: মাহফুজুর রহমান

মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর প্রতিনিধি): অকাল বৃষ্টিতে আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন চাঁদপুরের আলু চাষিরা। রোপণ করা আলু বীজ নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেক চাঁদপুরের কৃষকরা। এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার টাকা ধারদেনা করে লোকসানের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষকরা। এতে অকাল বৃষ্টিতে আলু চাষিদের স্বপ্ন বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানা যায়, জেলায় ৩ হাজার ৭শ’ ৯২ হেক্টর জমির আলু বীজ এখন পানির নিচে। যদি রোববার বা সোমবার থেকে টানা রোদ হয়, তবেই আলুর বীজ কিছুটা রক্ষা হবে। তবে চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, একচেটিয়া বৃষ্টি বন্ধ হলেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকবে আরো কয়েক দিন। এরপরই আসবে শৈত্যপ্রবাহ। এতে আলু চাষিদের জন্য কোনো সুখবর নেই।

চাঁদপুর জেলায় এবার (২০১৮-‘১৯) অর্থ বছরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২৪ হাজার ৫শ’ মেট্রেক টন। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬ শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে।

জানা যায়, চাঁদপুর সদরে এবার ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন। মতলব উত্তরে ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭শ’ মেট্রিক টন।

মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন । হাজীগঞ্জে ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন । শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ মেট্রিক টন।

কচুয়ায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। ফরিদগঞ্জে ১৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। হাইমচরে ১২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন।

এদিকে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলার নিচু এলাকা। সেখানে ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। পানির নিচে রয়েছে ৩শ’ হেক্টর আলু বীজ।

এছাড়া চাঁদপুর জেলা সদরে ৩ শ’ হেক্টর জমির আলু বীজ পানির নীচে রয়েছে। এ বছর কচুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে।

অসময়ের বৃষ্টির পানি জমে রোপণ করা আলুর বীজসহ সার বিনষ্ট হয়ে গেছে। কেবল বীজই বিনষ্ট হয়েছে ৬ লাখ টাকা ওপর। এছাড়া ইরি বোরো ধানের বীজতলা, করলা, ধনিয়া, মূলা, লালশাক, মরিচ, লাউ, কুমড়াসহ অন্যান্য শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আলুর জমি থেকে পানি সরানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে কৃষকের আলুর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পরপর ২ বছর আলু চাষে বৃষ্টির কারণে ধস নেমেছিল। এ বছর আলু চাষে অধিক ফলন উৎপাদনের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাতে বাগড়া দিয়েছে অকাল বৃষ্টি।

চাঁদপুর সদরের এক কৃষক বলেন, আমি দুই কানি (২শ’ ৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ নিচু জমি। বৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই ঘুম নেই। জমিনের লাইলে লাইলে আছি। যদি আল্লাহ রক্ষা করে। এ কৃষক আরো বলেন, গত বছর আলুর ভালো ফলন হয়েছিল কিন্তু আলু মাঠে থাকতেই বৃষ্টিতে সর্বনাশ করে দেয়। এরপরও লাভ হয়েছে।

হাজীগঞ্জের মাঠে গেলে দেখা যায়, আলু ক্ষেতে ড্রেন করছেন মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, তিন কানি আলু চাষ করেছি। সবগুলো আলু ক্ষেতেই পানির নিচে ড্রেন করে পানি বের করার চেষ্টা করছি।

এ কৃষক অভিযোগ করেন, জমিনে আলু রোপণ করেছি ১ মাস হয়েছে। এরইমধ্যে বৃষ্টি। তবে এ পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তা বা তাদের প্রতিনিধি আমাদের পরামর্শ দিতে আসেনি।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্র ধর জানান, কাজীরগাঁও মাঠে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্লক সুপারভাইজার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছে। তবে তাদের কে মাঠে যাচ্ছে না, আমি বিষয়টি দেখব। অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও চাঁদপুর সদর উপজেলার কোথাও কৃষকদের সহযোগিতার জন্য মাঠে সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (ব্লক সুপারভাইজারদের) দেখা যায়নি বলেও আলু চাষিরা অভিযোগ করেছেন।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. আবদুর রশিদ বলেন, এ বছর আলু চাষের প্রথম মৌসুমে ২ থেকে ৩ দিন বৃষ্টি হওয়ায় আলু বীজ রোপণ কিছুটা দেরী হয়েছে। কোথাও গাছের চারা উঠেছে, আবার কোথাও উঠেনি। আবার কোথাও কোথাও এখনো আলু বীজ রোপণ করছে।

তিনি বলেন, অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে কৃষকরা সমস্যায় পড়বে। তবে এই পরিস্থিতি এড়াতে জমিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষ করে যাদের জমির আলু বীজ বড় হয়েছে, তাদের অবশ্যই সেচ ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি দ্রুত সময়ে বৃষ্টি চলে যায়, তাহলে ভালো। আর যদি বৃষ্টি আরো কয়েকদিন থাকে, তাহলে কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা

This post has already been read 3077 times!

Check Also

মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি ও সুষম সার ব্যবহার বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

পাবনা সংবাদদাতা: পাবনা’র ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মৃত্তিকা সম্পদের যৌক্তিক ও লাভজনক ব্যবহার, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি …