নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের মাচের্র ১৯ তারিখে পোলট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা পালন করবেন “আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি দিবস”। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও ‘মুজিব বর্ষ’কে স্মরণীয় করে রাখতে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প উদ্যোক্তারা প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ নিয়েছেন। চলতি বছর থেকে দেশের প্রতিটি মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান ও মেধাবি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাঙালী জাতিকে সম্মানজনক অবস্থানে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের পক্ষ থেকে নতুন এ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ বিষয়ে আগাম বার্তা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান (শাহরিয়ার) লিখিত বক্তব্য পেশ করে বলেন, ‘পোল্ট্রি দিবস’ হচ্ছে এমন একটি দিন যে দিনটি জুড়েই থাকবে পোল্ট্রি নিয়ে নানান সব আয়োজন। এদিনে দেশের স্বনামধন্য বাবুর্চিদের দিয়ে পোল্ট্রি’র মাংস ও ডিমের মজার মজার খাবার রান্না করা হবে, চলবে প্রতিযোগিতা! শিশুদের জন্য থাকবে ফানগেমস, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা সভা, এছাড়াও হ্রাসকৃত মূল্যে ডিম ও মুরগির মাংস বিক্রিরও ব্যবস্থা থাকবে। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে পোল্ট্রি’র মাংস যে কতটা সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্য-সম্মত সে বার্তাটি পৌঁছে দেয়াই হবে এবারের মূল উদ্দেশ্য।
ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আলী ইমাম বলেন, সার্বজনিনভাবে ‘পোল্ট্রি দিবস’ পালনের রীতি এখনও শুরু না হলেও এ দিবসটির উদযাপন শুরু হয়েছিল আজ থেকে বহুবছর আগেই। যতটুকু জানা যায় ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’র ভার্সাইলেস নামক একটি ছোট্ট গ্রামে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন- ‘পোল্ট্রি’ হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক উৎপাদিত মাংস। বিশ্বে উৎপাদিত মোট মাংসের প্রায় ৩০ শতাংশই পোল্ট্রি থেকে আসে। আর বাংলাদেশে মোট প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৪৫ শতাংশের যোগান দেয় পোল্ট্রি খাত।
ওয়াপসা- বাংলাদেশ শাখার সাবেক সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, পুষ্টি সূচকে বাংলাদেশ পূর্বের চেয়ে যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করলেও অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা এখনও নিতান্তই কম নয়। অপুষ্টির কারণে মানুষ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, শিশুরা খর্বাকৃতির হচ্ছে, রক্ত-স্বল্পতা, অকাল বার্ধক্য, অকালে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, এমনকি অকাল মৃত্যুর কারণও ঘটছে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয়টি হচ্ছে অপুষ্টি’র প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। আর সবচেয়ে ভরসার বিষয়টি হচ্ছে- একটু সচেতন হলে খুব সহজেই এ অপুষ্টির অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি এবং সেজন্য অনেক বেশি টাকা খরচেরও প্রয়োজন পড়েনা। পোল্ট্রি আমাদের জন্য সে সুবিধাটিই এনে দিয়েছে।
খালেদ বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদন নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ এখন পোল্ট্রি শিল্প। এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার বন্ধ করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে যৌথ উদ্যোগে তৃণমূল খামারিদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে, এমনকি দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দেশে এনে মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন- বাংলাদেশ যে নিরাপদ পোল্ট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়েছে তার প্রমাণ হচ্ছে- এন্টিবায়োটিক নয় বরং প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে পোল্ট্রি শিল্পে। ২০১৭ সালে দেশীয় ফিড ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রায় ৩০০০ মে.টন এজিপি অলটারনেটিভ এডিটিভস (AAA) আমদানি হয়েছিল যার মূল্য প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা। প্রায় ৩৪ লাখ মে.টন ফিড এ পরিমান AAA দিয়ে তৈরি করা যায়- যা ছিল ২০১৭ সালে উৎপাদিত ফিডের প্রায় ৮০ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, খামারিদের এ সচেতনতার কারণেই ব্রয়লার মুরগির মাংস এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও নিরাপদ।
ওয়াপসা-বিবি’র সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও আহ্কাব সভাপতি ডা. এম নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য যে কোন বছরের তুলনায় বিগত ২০১৯ সনে পোলট্রি মাংস উৎপাদন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে অন্য যেকোন প্রোটিন উৎসের চেয়ে সবচেয়ে সস্তা প্রাণিজ প্রোটিনের নাম পোলট্রি। তবে দীর্ঘদিন খামারিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়াতে সেক্টরটিতে এখন খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডা. আ্তাউর রহমান বলেন, একটি জাতিকে গড়ে তোলার জন্য সবার আগে শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান হওয়া জরুরি। একটি জাতিকে স্বাস্থ্যবান হিসেবে পোলট্রি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সুতরাং সেক্টরটি উন্নয়নে এবং মুজিব বর্ষ পালনে আমাদের অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) মাহবুবুর রহমান বলেন, সংবাদ মাধ্যমের প্রচারের কারণে পোলট্রি মুরগি ও ডিম খাওয়ার পরিমান বিগত দশকের তুলনায় বেড়েছে। তবে আমরা এ মুহূর্তে উৎপাদন বাড়ানোতে আর জোর দিতে চাইনা। ব্রয়লার মাংস পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাংস উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাংসের নাম ব্রয়লার। সোনালী মুরগির বিস্তার এতটা হওয়া উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন এ সময় তিনি।