ডেস্ক রিপোর্ট : কৃষি কার্যক্রম জোরদারকরণের জন্য ‘‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’’ এ স্লোগান তুলে দেশে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কৃষি গ্রাজুয়েটদেরকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেছিলেন যাতে করে মেধাবী ছাত্ররা কৃষি শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়। তাঁর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এ সিদ্ধান্তের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হওয়ার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, যার ফলে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। তিনি কৃষি গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ১৯৭৩ সালে Presidential order no.৩২ নামে একটি অর্ডিনেন্স জারি করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার ফার্মগেটে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন অথচ ঐ স্থানে একটি পাঁচ তারা হোটেল স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। বঙ্গবন্ধুর সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বকীয় ইনস্টিটিউশনরূপে আত্মপ্রকাশের সূত্রপাত হয়।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক তার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গাজীপুরস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) চত্বরে ভিডিও কনফারেন্স -এর মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বাইশ লক্ষ কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছিলেন কৃষক দরদী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এ মানুষটি বঙ্গবন্ধু । বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে তিনি উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করেছিলেন। তিনি শিক্ষিত যুবকদেরকে গ্রামে ফিরে গিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে নিবিড় কৃষি কাজ করার জন্য প্রেরণা দিয়েছিলেন এবং উদ্বুদ্ধ করেছিলেন যেন আমাদের দেশের উর্বর মাটির এক ইঞ্চিও অনাবাদি না থাকে। বঙ্গবন্ধু সরকারই সর্বপ্রথম গ্রামের দরিদ্র বৃদ্ধ মানুষের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রথা চালু করেছিলেন। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য তিনি ধান, পাট, আখ সহ কৃষি পণ্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, বারি জন্মলগ্ন থেকেই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দুই শতাধিক ফসল নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছে। বারি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৫শ৫৮টি উচ্চ ফলনশীল জাত ও ৫শ৩১টি ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এসডিজি-২ এর ৫টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ বারি ইতোমধ্যে ৬৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে কাউকে পিছিয়ে না রেখে সকলকে নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা। এ চেতনাটি হৃদয়পটে ধারণ করে সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক গৃহীত কর্মকান্ডসমূহ বাস্তবায়ন করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আপামর জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত ঘটাতে হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে সহায়ক হবে। এরই ফলশ্রুতিতে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে জায়গা করে নিবে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর হৃদয়পটে বাংলাদেশটিকে ধারণ করেছিলেন। তাঁর চেতনার উৎস ছিল এ দেশের মানুষের ভালবাসা। তাঁর আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের অধিকার অর্জিত হয়েছে। তাঁর জন্মশত বার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু আমাদের চেতনা ও মানসপটে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিভূকে চিরজাগ্রত রাখার প্রত্যয়ে বিএআরআই এর অঙ্গনে স্থাপিত ম্যুরাল প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকসহ সকলকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করবে ও কর্মপ্রেরণা যোগাবে বলে বিশ্বাস করেন মন্ত্রী।
স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধন করতে পেরে তিনি গর্বিত। বঙ্গবন্ধুর চেতনা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বাঁচবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে এবং গড়ে উঠবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ যা প্রকৃত অর্থেই বিশ্বের বিস্ময় বল্লেন মন্ত্রী।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান এর সঞ্চলনায় মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।