শনিবার , নভেম্বর ২৩ ২০২৪

আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের সাথে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ চায় দেশীয় ডেইরি উদ্যোক্তাগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গুড়া দুধের সাথে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ চায় দেশীয় ডেইরি শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক খামারিগণ। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অক্সফ্যাম ও বাংলাদেশ ডেইরী ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিডিএফ) আয়োজিত ’প্রান্তিক দুগ্ধ খামারীদের বিকাশে সরকারী-বেসরকারী নীতিমালা ও সেবা : সমস্যা ও সম্ভাবনা‘  শীর্ষক জাতীয় সভায় ডেইরি শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা এ দাবী জানিয়েছেন। এ সময় বক্তারা বাল্ক আকারে আমদানি করা গুঁড়া দুধের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করার উপরের সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান। এছাড়াও দেশের দুগ্ধ শিল্প বিকাশে সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সুবিধাসহ সম্প্রসারণ সেবা ও ন্যায্য মূল্যে বাজারে দুধ বিক্রি নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছে প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিরা।

বক্তাদের দাবী, দেশে পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্বেও যথাযথ নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট পরিসেবার অভাবে এই শিল্পটির বৃদ্ধি ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আফতাব উদ্দিন সরকার, মাননীয় সংসদ সদস্য, নীলফামারী-১;  বিডিডিএফ সভাপতি এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি; কাজী ওয়াছি উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক, এলডিডিপি; ডা. আবদুল জব্বার শিকদার, মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর; ড. নাথুরাম সরকার, মহাপরিচালক, বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ এই শিল্পের সাথে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে দেশীয় ডেইরী শিল্প। বর্তমানে ডেইরী খাত একটি বাণিজ্যিকভাবে সফল শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে এক লক্ষেরও বেশি নিবন্ধিত খামারি রয়েছেন যার প্রায় অর্ধেকই উচ্চশিক্ষিত যুবকদের উদ্যোগে পরিচালিত। একইসাথে গবাদী পশুর মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাত গুণ। দেশে দুধের মোট চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এখন দেশীয় উদ্যোক্তারা সরবরাহ করছেন। এমন একটি সম্ভাবনাময় শিল্পখাত কেবল অসম শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে এর সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়বে কয়েক লক্ষ মানুষ যারা এই খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত যা বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী নীতির পরিপন্থী।

তাঁরা আরো বলেন, উন্নয়নের এই ধারাকে টেকসই ও মজবুত করতে সরকারের পাশাপাশি ডেইরী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন- দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান, গবাদিপ্রাণির কৃত্রিম প্রজজনকারী প্রতিষ্ঠান, প্রাণিখাদ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, দুগ্ধ খামারি, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।

সভায় মূল নিবন্ধ পাঠ করেন বিডিডিএফের প্রচার সম্পাদক ও অক্সফ্যামের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. মুতাসীম বিল্লাহ। তিনি বলেন,  দেশে তরল দুধের উৎপাদন বিগত ১০ বছরে বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা প্রায় এক লাখ এবং দুধের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান ধারায় দুধের উৎপাদন অব্যাহত থাকলে দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে যা এই বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশের বানিজ্য ঘাটতি কমাতে সক্ষম হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অক্সফ্যামের ইকোনোমিক জাষ্টিস ও রেসিলিয়েন্স প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. খালিদ হোসাইন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রান্তিক নারী খামারিরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এ সময় কুড়িগ্রামের রৌমারীর প্রান্তিক খামারি আমেনা বেগম বলেন, প্রান্তিক জনপদে পর্যাপ্ত চিলিং প্লান্ট না থাকায় প্রায় উৎপাদিত দুধ নষ্ট হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে এই শিল্পের সাথে জড়িতদের জন্য চিলিং প্লান্ট স্থাপনসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা প্রদানের দাবী জানান।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’ বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের সময় থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার মধ্য দিয়ে বিগত চার দশকে বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের ডেইরী শিল্পের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। বর্তমানে সংস্থাটি বাংলাদেশের চরাঞ্চলের দূর্যোগ পীড়িত খামারিদের নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের  উত্তোরাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত ৫টি জেলার (যেমন- গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর) ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামারিদের  ঋণ সুবিধা, নবায়নযোগ্য জ্বালানী, বাজারে অভিগমন ও সম্প্রসারণ সেবা নিশ্চিকরণের মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ খামারির জীবন মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। উক্ত প্রকল্পে খামারিদের বিভিন্ন ধরনের সফলতা, প্রতিবন্ধকতা ও শিক্ষণসমূহ সরকারি বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের ডেইরী শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে জানায় অক্সফাম।

This post has already been read 3789 times!

Check Also

মহিষের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

সাভার সংবাদদাতা: মহিষের উৎপাদন বাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, একসময় …