ফারুক আলম (লালমনিরহাট প্রতিনিধি) : নতুন করে সাজছে কৃষক। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা। লালমরিরহাটে তামাক চাষের স্বর্গরুপ হচ্ছে আদিতমারী। অর্থকরি ফসলের মধ্যে তামাকের বিকল্প কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্থানীয় কৃষকেরা। যুগের পর যুগ তারা তামাক চাষেই তাদের স্বপ্ন বুনছিলেন। দেখছিলেন আলো, কিন্তু তা ছিল সূর্য গ্রহণের আগের আলো। তামাকজাত কোম্পানিগুলোর নিত্যনতুন ফাঁদে পা রেখেই চলছিল, এই তামাক চাষ আর কৃষক এবং ভূমির উর্বরতা নিয়ে ছেলেখেলা।
তামাকজাত কোম্পানিগুলোর দৌড়াত্মের বিরোধীতা করে থেমে ছিলনা জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলনের সাথে লালমনিরহাটের গণমাধ্যম এবং সমাজকর্মি, সমাজসংস্থা। জেলাতে দীর্ঘদিন থেকেই জোরদার বিরোধীকারী ছিলেন এস দিলিপ রায়, মাজেদ মাসুদের মত অনেক সাংবাদিক -লেখক- কবি।
সরেজমিন ঘুরে এবার দেখা যাচ্ছে, তামাক কোম্পানির লোভনীয় ফাঁদ থেকে বের হয়ে বোরো ধানের চাষে ঝুঁকে পড়েছেন লালমনিরহাটের কৃষক সমাজ। তামাক ক্ষেতের পাশেই বিস্তৃত মাঠে রোপন করছেন বোরো ধানের চারা। শুধুমাত্র আদিতমারীর আদিতমারী উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে ২৪টি ব্লকে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা ব্যস্ত বোরো ধানের চারা রোপনে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিরেদ্রনাথ রায়ের কাছে মাঠের খবর জানতে গেলে,তিনি জানান
আমার পলাশী ইউনিয়নে নামুড়ী-ব্লকে ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। ইতোমধ্যে অর্ধেক জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে। রোগ-পোকা কম হবে ক্ষেতের পরিচর্যার সুবিধা ও ফলন বৃদ্ধিতে আমরা LLP (লাইন, লোগো,পার্চিং) পদ্ধতি ব্যবহার করে চারা রোপনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
আদিতমারী কৃষি কর্মকর্তা আলী নূর এগ্রিনিউজ২৪.কম -এর সাথে আলাপচারিতায় জানান, তিনি মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিয়ত যাচ্ছেন এবং কৃষকদের মধ্য তামাকের বিপরীতে বোরো চাষে উৎসাহিত করছেন।পার্চিং (বাঁশ কঞ্চি/পাখি বসার স্থান) করে বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭টি পাখি বসার জায়গা করে দেয়া গেলে, ধানের ক্ষতিকর পোকা,যেমন চুঙ্গি, মাজরা, মথ পাখি খেয়ে ফেলে। যার ফলে মেকানিক্যাল সমস্যাগুলো দূর হয়, ফলন ভাল হয়। কীটনাশকের ব্যবহার কম হয়। তিনি জৈব সারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারপ করে বলেন,পঁচা গোবর সার যত ইচ্ছে কৃষক ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি ভার্মি কম্পোস্ট যদি ৮০ থেকে ১০০ কেজি ব্যবহার করেন, তাহলে তারা বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধু ভুষণ এর সাথে এ প্রতিনিধি কথা বললে তিনি জানান, জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ করছেন কৃষক। তামাক প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কোনভাবেই তামাক চাষের জন্য ব্যবহৃত বীজ, সার, যন্ত্রপাতি-প্রযুক্তি কোন বিষয়েই কোন প্রকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন না। তামাকের বিপরীতে কৃষক শীতকালিন সবজি, জোয়ার, ভুট্টা এসব চাষ করে এবং এ বিষয়ে তার দপ্তর সব সময় নিরলস কাজ করে যাবে। তিনি এ আশাও ব্যক্ত করেন, তামাক থেকে এই জেলা একদিন মুক্ত হবে।