দেবোতোষ কুণ্ডু বাপ্পা (জয়পুরহাট) : প্রতিনিয়ত রোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জয়পুরহাটের পোলট্রি খামারিরা। দেশের অন্যতম পোলট্রি জোন হিসেবে পরিচিত জেলাটিতে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় আট হাজার পোলট্রি খামার রয়েছে। এই জেলায় নতুন বছরে পোলট্রিতে মহামারি রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রানীক্ষেত এবং গাম্বোরো রোগ নিয়ে খামারিরা খুব চিন্তিত, রোগ দুটির প্রকোপে অনেক খামারি এখন পথে বসতে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে জয়পুরহাট সদর উপজেলার মুহাম্মাদাবাদ ইউনিয়ান এর বেলামলা এলাকার খামারি মোতালেব হোসেন এগ্রি নিউজ ২৪.কম কে বলেন, “এই বছরে পোলট্রিতে যে মহামারি শুরু হয়েছে তা আমি আগে কখনো দেখিনি। আমার খামারে মাত্র আড়াই হাজার মুরগি এক রাতে মারা গেছে।”
কোন চিকিৎসা করিয়েছিলেন কি না -এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যার কাছ থেকে খাদ্য, বাচ্চা ক্রয় করি (ডিলার) তার পরামর্শে অনেক টাকার ওষুধ খাইয়েছি কিন্তু মুরগিগুলোকে বাঁচাতে পারিনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতাকে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন কি না জানতে চাইলে উক্তরে বলেন, ডিলারই আমাদের মুরগির ওষুধ সরবারহ করে এবং চিকিৎসা দেন।
একই ইউনিয়নের খামারি সাইদুল মিয়া বলেন, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মুরগির খামার করেছি, এখন সব (৩ হাজার) মুরগী মারা গেছে। এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।
একই ইউনিয়ান –এর আরেক খামারি নিষিরমোর এলাকার সাগর জানান, আমরা খামারিরা পথে বসলে কারো কিছু যায় আসেনা। খাদ্যের দাম বাড়ছে, ওষুধের কার্যক্ষমতা কমছে- যেন এগুলো দেখার কেউ নেই, বলার কেউ নাই, আমাদের কথা শুনার মতো কারো সময় নাই। এখন জমি বিক্রয় করে ডিলারকে টাকা পরিশোধ করতে হবে, না হলে চেকের মামলা দিবে, কি করবো বৌ বাচ্চা নিয়ে গাছ তলায় দাঁড়াতে হবে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়ান এর উত্তম দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এই শিল্প ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবেনা। আমরা খামারিরা পথের ফকির হয়ে গেছি। আমি সাত হাজার মুরগী লালন পালন করে সংসার চালাতাম, সকল মুরগী মারা যাওয়ায় আমার পুঁজি শেষ, এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। অন্য কর্মসংস্থান খুঁজছি।
পোলট্রির রানীক্ষেত, গাম্বোরো রোগের প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল ইসলাম বলেন, এই বছর জয়পুরহাট জেলায় হাজার হাজার মুরগি মারা গেছে। রানীক্ষেত ও গাম্বোরো রোগ দুটি ভাইরাসজনিত রোগ, এই রোগের সুনির্দিষ্ট কনো চিকিৎসা নেই। তবে জৈব নিরাপত্তা পরিপালনের মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ওষুধ কাজ করে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এগ্রিনিউজ ২৪.কম কে বলেন , হাতুরে ডাক্তার ও ডিলারের পরামর্শে মানহীন, নিম্নমানের ওষুধ, ভ্যাকসিন ব্যবহারের ফলে মুরগির মৃত্যুহার কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। এখন খামারিদের সচেতন হতে হবে এবং হাতুরে ডাক্তার ও ডিলারের পরামর্শে মানহীন ও নিম্ন মানের ঔষধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে, তবেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।