ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা) : চিকেন বার্গার, গ্রিল চিকেন থেকে শুরু করেন বাড়িতে নতুন মেহমান আগত পর্যন্ত মুরগির আধিপত্য রয়েছে। খাদ্য তালিকায় মুরগী না হলে তো অনুষ্ঠান বা আত্মীয় আপ্যায়ন অপূর্ণ থেকে যায়। অপূর্ব স্বাদ আর তৃপ্তিতে রসনার কাজটি সারতে দেশি ও পোল্ট্রি মুরগির তুলনা নেই। এর পাশাপাশি সেই আদিকাল থেকেই মুরগি ডিম এবং মাংস দিয়ে আমাদের প্রোটিনের অভাব পূরণ করে আসছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির দাম ক্রেতাদের নাগালে রয়েছে। একদিকে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়া অন্যদিকে চাহিদার চেয়ে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বেশি হওয়ায় খামারীরা ন্যয্য মূল্য থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। মুরগির মাংসের বাড়তি চাহিদা এবং অতিরিক্ত উৎপাদনে কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশেষ করে চলতি শীত মৌসুম শুরু হতেই খুলনাঞ্চলের বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম পড়ে যাওয়ায় খামারিরা বেকায়দায় পড়েছেন। বেশি দামে কিনে, কম দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। সবজির দামে মুরগি বিক্রি করায় আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন এখানকার খামারিরা। কারণ হিসেবে চাহিদার চেয়ে অধিক উৎপাদন এবং বাজারের মাছ বেশি থাকায় মুরগির বাজারে এই পতন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বাজারদর এমন চলতে থাকলে বহু খামারিরা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বেকার হয়ে পড়বে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুঁজি সংকটে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কারনে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসানের ঘানি টানছে পোল্ট্রি খামারিরা। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগের নামে কিছু মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। ফলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে এ ব্যবসা থেকে আনেকেই দূরে সরে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, পোল্ট্রি মুরগির উৎপাদন দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর উৎপাদন বেশি হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছে না খামারিরা। ফলে তারা প্রতিনিয়ত লোকসানের ঘানি টানছেন। তাই অনেকেই এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে এমনই মন্তব্য করছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানিয়েছে, কিছু বহুজাতিক কোম্পানি বিদেশী বিনিয়োগের নামে আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ করছে। আর এ বিনিয়োগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশের সাধারন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। তবে খামারিরা ব্রয়লার মুরগি পাইকারী প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। অথচ খামারিদের ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি উৎপাদন করতে ব্যয় হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। অর্থাৎ, পোল্ট্রি খামারীদের উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে স্বল্প মূল্যে। যা পোল্ট্রি খামারীদের জন্য একটা অশনি বার্তা।
পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতি খুলনা’র মহাসচিব এসএম সোহরাব হোসেন জানান, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে পোল্ট্রি খামারিরা। সংগত কারনে এ অঞ্চলের পোল্ট্রি শিল্পে এক প্রকার ধবস নামতে শুরু করেছে। আর এই ধবস নামার কারনে খুলনাঞ্চলে ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারীরা আস্তে আস্তে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের এ ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ফলে ব্যাপক হারে খামারীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিলে এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান হবে সংকচিত। আমাদের দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের নামে কিছু মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি এ শিল্পে বিনিয়োগ করছে। বড় আকারের এই বিনিয়োগকারীদেও উৎপাদন কষ্ট কম হওয়ার ফলে আমাদেও এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারীর পোল্ট্রি শিল্প ব্যবসায়ীরা তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না বলেই তাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মুল্যে বাজারে পোল্ট্রি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারীর পোল্ট্রি শিল্প ব্যবসায়ীরা দিনকে দিন তাদের পুজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।