শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

অরগানিক কৃষিগ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে খুলনার বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : বর্তমান সময়ে রাসায়নিকমুক্ত শাক-সবজি খাওয়ার কথা শুধু ভাবাই যায়, বাস্তবে তা পাওয়া যায় না। কৃষকরাও অর্গানিকভাবে সবজি চাষ করতে চান না। তবে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামের কিষান-কিষানিরা। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়াই নিরাপদ সবজি আবাদ করছেন তারা। ফলে সাধারন মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়াতে পারছেন এই ভেবেই তারা আনন্দিত। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা বেশ কাজে আসছে বলে জানান তারা। খুলনা জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়। সারাবছর জুড়েই এই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে শীত মৌসুম (রবি শষ্য) ও গ্রীষ্ম মৌসুমে (খরিপ মৌসুম) ব্যাপক সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রাম ও সাহস ইউনিয়নের গজেন্দ্রপুর গ্রামটির চাষীরা অর্গানিক (নিরাপদ) সবজি আবাদ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বাজারে বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামের সবজির বিশেষ চাহিদাও রয়েছে। সেই চাহিদার আলোকে চাষীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে অর্গানিক সবজি আবাদে উৎসাহী হচ্ছেন। তারা এখন সবজিতে সরাসরি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন না।

কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা ফসলে পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ, পার্চিং পদ্ধতি, আলোকফাঁদ ও হলুদ বোর্ড ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করছেন। তাছাড়া সবজি বাজারে তোলার আগে সেটির নিরাপদ কাল পরিক্ষা করেই তবে সেগুলো বাজারে তুলছেন। কৃষকদের এই প্রচেষ্টার কারণে গ্রাম দিিুট এখন ‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ বা ‘অরগানিক কৃষিগ্রাম’ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। ৩ শতাধিক চাষী তাদের জমিতে চাষ করেছেন নিরাপদ শাকসবজি।

সরেজমিন বরাতিয়া গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের চারদিক সবুজ সবজির ক্ষেতে ভরা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুটি গ্রামের ১১০ হেক্টর ( ১ হেক্টর= ২.৪৭ একর) জমিতে চাষ হচ্ছে নানা রকম সবজি। বর্তমানে জমিতে রয়েছে শিম, টমেটো, ফুলকপি, খিরা, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, মূলা, ধনেপাতা, বেগুন ইত্যাদি। গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য চাষ হচ্ছে বরবটি, শশা, ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, ডাটা শাকসহ অন্যান্য সবজি। চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালিন টমেটোর। জমিতে বরবটি ক্ষেতে সেচ দিচ্ছিলেন নিখিল কুমার নন্দী। তিনি বলেন, আগে আমরা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতাম। কীটনাশক ¯েপ্র করতাম। বিভিন্ন জাতের শাকসবজি আবাদ করেছি। তবে আমরা জানতাম না, এ সব ফসল বিষাক্ত। এসব খেয়ে মানুষেরা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে জানতে পারি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানুষকে আর বিষযুক্ত সবজি খাওয়াব না। তিনি ১২ বিঘা জমিতে নানারকম সবজির আবাদ করেছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ‘নিরাপদ কৃষি গ্রাম হচ্ছে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকে বিষমুক্ত করে নিরাপদ খাদ্য করতেই এ উদ্যোগ। এতে কৃষকের সাড়া মিলছে প্রচুর। তিনি বলেন বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর গ্রামে তিনশতাধিক চাষী ১১০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করছেন। যার উৎপাদনে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আয় হবে চাষীদের।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে সব সবজির আবাদ হচ্ছে তাতে কীটনাশক ব্যবহার না করলে ভাল ফলন পাওয়া যায় না। তবে আমরা বিষমুক্ত সবজি আবাদের জন্য কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করছি। মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে নিয়মিত কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি কীটনাশকের ক্ষতির মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন থাকে। এক্ষেত্রে কীটনাশকের প্যাকেটের গায়ে সবুজ, হলুদ ও লাল ত্রিভূজের চিহ্ন দেয়া থাকে। সবুজ চিহ্নিত কীটনাশকের মেয়াদ ৭দিন, হলুদ চিহ্নিত কীটনাশকের মেয়াদ ১৫দিন এবং লাল চিহ্নিত কীটনাশকের মেয়াদ থাকে ২৮দিন।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুটি গ্রামকে নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করাসহ একটি গ্রামকে নিরাপদ ফল গ্রাম হিসেবে ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া ও গজেন্দ্রপুর দুটি গ্রামে নিরাপদ সবজি গ্রাম ঘোষনা করা হয়েছে।

This post has already been read 3094 times!

Check Also

মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি ও সুষম সার ব্যবহার বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

পাবনা সংবাদদাতা: পাবনা’র ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মৃত্তিকা সম্পদের যৌক্তিক ও লাভজনক ব্যবহার, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি …