মো. সিরাজুল ইসলাম : করোনা সংকটের কারণে সামনের দিনগুলোতে খাদ্য সংকট আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। অতএব এ সময় খামারে বাচ্চা তুলে লাভবান হওয়া যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস! যদিও বর্তমানে মুরগীর ও ডিমের বাজার ভালো নয়? খামারিরা ক্ষতির সমূখীন হচ্ছেন নিঃসন্দেহে, এটার মূল কারণ দেশের বেশিরভাগ জায়গায়ই যোগাযোগ ব্যবস্হা বিছিন্ন রয়েছে, যার দরুন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মালামাল পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার প্রেক্ষিতে কৃষি পণ্যের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না, করোনা আতংক কেটে গেলে চাহিদা এবং দর উভয়ই বাড়বে বৈকি।
এছাড়া শীতকালীন শাক সবজি শেষ, মাছের সীজন আসতে বেশ সময় বাকী রয়েছে, আসছে রমজান- ঈদ ও ঈদ-পরবর্তী বিয়ে-সাদী সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান আর বাঙ্গালীদের অনুষ্ঠান মানেই মাংস ডিম থাকা আবশ্যক। অতএব, পোল্ট্রির কোন বিকল্প নেই।
আর করোনা আতংকে অনেকেই ফার্ম বন্ধ রেখেছেন যাদ দরুন বর্তমানে বাচ্চার দামও একদম তলানীতে, এক কথায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। কেউ হয়তো বলবেন, ফিড ওষুধসহ আনুসঙ্গিক সবকিছুর দাম বেড়েছে। এর সাথে আমিও একমত, তবুও বলবো- মুরগীর দাম ভালো থাকলে এসব তেমন বিষয় নয়!
বর্তমানে এলাকাভেদে প্রতি কেজি মুরগীর দাম ৮০-১১০ টাকার মধ্যে রয়েছে। আমার ধারণা অচিরেই এর দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০-১৭০ টাকায় চলে আসবে এবং খুচরা পর্যায়ে ১৮০-২০০ টাকা হতে বাধ্য। অতএব, আমি বলবো গুজবে কান না দিয়ে একটু ঝুঁকি নিয়ে হলেও শেডে বাচ্চা তুলুন। সেটা হোক ব্রয়লার, কক্, সোনালী কিংবা লেয়ার যার যে রকম প্রস্তুতি রয়েছে সে মোতাবেক বাচ্চা তুলতে পারেন।
এদেশে কম বেশি আঠারো কোটি লোকের বসবাস। এখানে ফার্মের মুরগী ও ডিম ছাড়া দৈনন্দিন ভোজন প্রায় অসম্ভব বলা চলে, সাথে যোগ হয়েছে বাহারী সব রকমারী আইটেমের ভোজনবিলাস। এটা এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও ছুয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ীর স্বাভাবিক রান্না বা অতিথি আপ্যায়নে হরহামেশাই মুরগী ও ডিমের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
এখানে উল্লেখ্য, সুযোগ পেলেই কোম্পানিগুলো বাচ্চা ও ফিডের মূল্য বৃদ্ধি করে দেয় তাই হ্যাচারী বিডার্স ফার্মস মালিক তথা বাচ্চা ও ফিড উৎপাদন সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ :
১. বাচ্চা উৎপাদনে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা, কোনক্রমেই অতিরিক্ত উৎপাদন করা যাবেনা। অর্থাৎ চাহিদা ও উৎপাদনে সমন্বয় ঘটানো জরুরি।
২. হ্যাচারি তথা বিডার্স ফার্মস পরিচালিত কমার্শিয়াল ব্রয়লার ও লেয়ার ফার্ম বন্ধকরণ।
৩. বাচ্চার দাম সব সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুযোগ হলেই বাচ্চার দাম না বাড়ানো।
৪. সরকারি সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় ক্ষুদ্র খামারিদের অন্তর্ভুক্তকরণ।
৫. পোল্ট্রির ভালো দিকগুলো মাথায় রেখে প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি, যাতে ভোক্তাদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আসে। কেননা, অনলাইনে যুগে পোল্ট্রির ভালো ও ইতিবাচক দিকগুলো বাদ দিয়ে নানা-মূখী বিরূপ প্রচারণা চলছে।
এই নিয়মগুলো অনুসরণ না করলে খামারিদের মাঝে আস্থার সংকট রয়ে যাবে, এতে করে পোল্ট্রি শিল্প দীর্ঘমেয়াদি টেকসই হতে বাধ্য।
মনে রাখা প্রয়োজন : এক সময়ের ক্ষুদ্রাকার কোম্পানি আজ বিশালাকার গ্রুপ অব কোম্পানি হয়েছে। এর মূল অবদান দেশের প্রান্তিক খামারিদের। আপনাদের বিলাসী জীবন, এসি রুম, এসি গাড়ি, দেশ বিদেশে ভ্রমণ বিশাল কনফারেন্স/সম্মেলন -এর সুবাতাস কখনো এরা ভোগ করতে পারেনা, থেকে যায় এসবের বাইরে। এসব খামারি না থাকলে এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বেই!
অতএব, আমি মনে করি খামারিদের সুযোগ সুবিধার কথা মাথায় রেখে সকল কর্মপন্থা নির্ধারণ একান্ত জরুরি।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রাদার্স পোলট্রি ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা।
brothers poultry5@gimail.com