বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

বসতবাড়ির আঙ্গিনা এখন চোখ জুড়ানো সবজি ক্ষেত!

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার রূপসা উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকের বসত বাড়ির আঙ্গিণা এখন সবুজ শাক সবজির ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। আঙ্গিণার পাশাপাশি কৃষকরা তাদের পতিত জমিতেও ফলিয়েছেন নানা ধরণের শাক সবজি। যা দেখলে দু’ চোখ জুড়িয়ে যায়। মূলত: কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের ফলে কৃষকের বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে গড়ে উঠেছে শাক সবজি এ ক্ষেত। উপজেলার আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান নিজ বেতনের টাকায় কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রথম বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করায় তার সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার এবং করোনা পরবর্তী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের আলাইপুর ব্লকের উদ্যোগে কৃষকের বসত বাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমিতে শাক সবজি চাষে সহায়তা হিসেবে কৃষকের বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে বীজ বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় এপ্রিল মাসের শেষে এ ব্লকের আলাইপুর, পুটিমারি ও আনন্দনগর গ্রামের ১৫ জন কৃষক ও কৃষানীর বাড়িতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়। আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান করোনা ভাইরাসের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথমে স্ব-উদ্যোগে এবং পরে রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসারের সহযোগিতায় এসব কৃষক ও কৃষানীদের বাড়িতে লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, গিমাকলমি, লাউ, উচ্ছে ও ধুন্দলসহ বিভিন্ন পকার শাক সবজি বীজ পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে তিনি এসব কৃষক ও কৃষাণীর বাড়িতে গিয়ে বিতরণকৃত শাক সবজি চাষের কাজ নিয়মিত তদারকি করেন। বিনামূল্যে শাক সবজির বীজ পেয়ে কৃষকরা তাদের বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে তা বপণ করেন। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই বীজ থেকে সহজে শাক সবজির চারা গজায়, যা এখন দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠেছে।

আলাইপুর গ্রামের কৃষক মোঃ মহব্বত আলী শেখ জানান, মহামারি করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ও লকডাউনের কারণে ঘরে অলস বসে ছিলাম। এ সময় আমাদের এলাকার কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান বাড়িতে এসে কয়েক প্রকার সবজি বীজ বিনামূল্যে দিয়ে তা বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে লাগাতে বলেন। প্রথমে ঝামেলা মনে হলেও পরে বীজগুলো বসত বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে লাগাই। ইতোমধ্যে এসব বীজ থেকে চারা গজিয়ে তা বড় হয়েছে। এখন এসব শাক সবজির পরিচর্যা করেই সময় কাটছে আমার। অল্প দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যাবে এবং ফলনও ভলো হবে। ঘরের কাছেই নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে পেরে খুশি কৃষক মহব্বত আলী শেখ। তিনি আরও জানান, এর ফলে বাজার থেকে সবজি ক্রয় করতে হবে না। এছাড়া অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে নগদ কিছু অর্থও আয় করা যাবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার এবং করোনা পরবর্তী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রথমে নিজ উদ্যোগেই আমি এ কর্মসূচি গ্রহণ করি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের এ ব্লকের প্রতিটি কৃষকের বসতবাড়িসহ পতিত জমি শাকসবজি চাষের আওতায় আনা হয়। আঙ্গিণার পতিত জমি এখন চোখ জুড়ানো সবুজ শাক সবজির ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তার এ উদ্যোগে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তিনি।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় অন্য ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণও বসত বাড়িতে শাক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করছেন। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী বাগমারার সংগঠন আরআর এন, আমদাবাদের ম্যাক্স সমবায় সমিতি ও ইলাইপুরের অনুশীলন মজার স্কুলের উদ্যোগেও কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে শাক সবজির বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।তিনি বলেন, বসত বাড়িতে সবজি-পুষ্টিবাগান স্থাপনের লক্ষ্যে এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২ টি কৃষি পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার, বেড়া ও পরিচর্যা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ / উপকরণ সরবরাহের জন্য প্রণোদনা সহায়তা প্রদানের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি কৃষকের বসত বাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমি শাক সবজি চাষের আওতায় আসবে।

This post has already been read 4864 times!

Check Also

কলাপাড়ায় পাটজাতীয় ফসলের আঁশ ও বীজ উৎপাদন বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল): পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিজেআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাটজাতীয় ফসলের আঁশ …