বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজের হাঁসি

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) :  উপকূলীয় খুলনার কয়রা আম্ফান ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে সবুজ কয়রা গড়ার মিশনে স্বাধীনতার ৪৯ বছরে ৪৯ মিনিটে ৪৯ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপজেলা ৭টি ইউনিয়নে লাগানো হয়েছে। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় কয়রা মদিনাবাদ সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে ৪৯ হাজার চারা রোপণের প্রধান অতিথি হিসাবে উদ্বোধন করেন খুলনা -৬ সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আক্তারুজামান বাবু। এ সময় তিনি পরিবেশ রক্ষায় লাগানোর কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, বাড়ির উঠান, ছাদ, সড়ক, অফিস-আদালতের ফাকা রাস্তা ঘাঠ, যেখানে পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে, সেখানেই গাছ লাগাতে হবে। বনজ, ফলজ ও ভেষজ সব ধরনের গাছ লাগালে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে।

ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবল এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলেই সরকারের ও নিজ ব্যক্তিগত ভাবে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সংসদ সদস্য আরো বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বনায়ন ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষকে বাঁচায়, দেশকে বাঁচায়। এসময় তিনি উপকূলীয় এলাকাসহ প্রতিকূল পরিবেশে যারা বৃক্ষরোপণ করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সরকারের পাশাপাশি দেশের সবুজ উন্নয়ন নিশ্চিত করে পরিবেশগত সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

সবুজ কয়রা গড়ার লক্ষে মানব কল্যাণ ইউনিটের উদ্যোগে “প্রকল্প অক্সিজেন” মিশনে বন্ধু ফাউন্ডেশন, গিভ বাংলাদেশ ও আমরাই বাংলাদেশ সহযোগীতায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলগুলির ৪১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক গাছ লাগাতে অংশ নেয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে এক যোগে ৪৯ মিনিটে ৪৯ হাজার গাছ লাগানো হয়।

কয়রা উপজেলার কিছু পানি বন্দী এলাকা বাদে আমাদি, বাগালী, মহেশ্বরপুর, মহারাজপুর, কয়রা সদর, উত্তর বেকদাশি, দক্ষিণ বেকদশী ৭টি ইউনিয়নে রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙ্গিনায়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পতিত খালি জায়গায় গাছের চারা রোপন করা হয়। গাছের মধ্যে ছিলো শিরীশ, লম্বু, পেয়ারা, কোদবেল ছবেদা , তেঁতুল, কৃষ্ণচূড়ূা, বকুল, জামরুল, আমলকি, আম, জাম, নিম এবং তাল গাছ এই ইভেন্টে রোপণ করা হয়েছে।

কয়রা উপজেলার মানব কল্যাণ ইউনিটের নেতৃত্বে ১৭টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগামী এক বছরের জন্য লাগানো গাছগুলির তদারকী করবেন। এক হাজার স্থানীয় অতি দরিদ্র মানুষ ফলদায়ক গাছ দেখাশোনা করার পাশাপাশি ফল গ্রহণ করবেন। জয় বাংলা এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সংগঠন মানব কল্যাণ ইউনিট এর সভাপতি আল-আমিন ফরহাদ বলেন, বৃক্ষ রোপনের মূল লক্ষ্য বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আম্ফান দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশ উপকূলীয় কয়রার লোনা পানিতে ভেঙ্গে পড়া সবুজ বেষ্টনী কে পুনরুদ্ধার করে কয়রাকে সবুজে রুপান্তরিত করা। সকল যুবদের সাথে নিয়ে ৪৯ হাজার গাছ লাগিয়ে, ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে শক্তিশালী করা।

সবুজ আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন, জলবায়ু সংকটে ক্রমাগত হুমকির মুখে উপকূল। বেড়েছে পরিবেশ দূষণ, কমছে সবুজ গাছপালার সংখ্যাও। দুর্যোগের ছোট-বড় ধাক্কা উপকূলকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। এসব দুর্যোগ এখনও প্রাণ কেড়ে নেয়। তবুও সচেতন নয় মানুষ। সচেতন নয় সম্ভাবনাময় প্রজন্ম। ফলে এখানকার জীবন-জীবিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। এ আঘাত ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়রায় ৪৯ মিনিটে ৪৯ হাজার গাছ লাগানো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা রাখবে। একই সাথে তিনি সকলের সবুজ সচেতনতা বাড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেন আন্দোলন চাই সবুজ সুরক্ষার জন্য’।

গাছের চারা রোপনে উপস্থিত ছিলেন কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজা, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এইচ এম হুমায়ুন কবির, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবু, জেলা যুবলীগ নেতা শামীম সরকার, যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম টিংকু, মানব কল্যাণ ইউনিটের সাধারন সম্পাদক জাহানে আলম উজ্বল, ছাত্রলীগ নেতা শিমুলসহ দলীয় নেতা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 2591 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …