বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

আতঙ্কে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষ

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো জরাজীর্ণ পাউবোর বেড়িবাঁধ। যা নিয়ে আতঙ্কে সময় পার করছেন উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধ এলাকার সাধারণ মানুষ। আর এই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ ধেয়ে আসার খবরে। এদিকে নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে ও কাছাকাছি বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কাও বিরাজ করছে।

খুলনা পাউবো সূত্র জানায়, জেলায় ৮৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে স্থানীয়দের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের দৈর্ঘ্য আরো বেশি হবে। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পে (সিইআইপি)র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, খুলনা ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার আওতাধীন নয়, ঝুঁকিপূর্ণ এ উপজেলাটি সাতক্ষীরা পাউবোর অধীন। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ মোকাবিলায় পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ও সিনথেটিক ব্যাগ মজুত রয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান  বলেন, পাউবো বিভাগ-১ এর মধ্যে রয়েছে ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। তারমধ্যে ২০/ ২৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো তা এখন আরো মজবুত করে নির্মান করা হয়েছে ।  সাতক্ষীরায় পাউবোর দু‌টি বিভাগের মধ্যে ৮০২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তবে উপকুলে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ ধেয়ে আসার খবরে চরম ঝুঁকিতে  থাকা  শ্যামনগর ও আশাশু‌নির মানুষ রয়েছে আতংকে ।

সুত্রমতে,জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর উচ্চ জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভাঙছে দুর্বল বেড়িবাঁধ। আর এই দুর্বল বেড়িবাঁধ টেকসই নির্মান না হওয়ায় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা । সুপার সাইক্লোন সিডর, ঘূর্ণিঝড় আইলা,ফনি,আম্পানের ক্ষত এখনো বয়ে বেরাচ্ছেন  উপকূলীয় জনপদের মানুষ । উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকার সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গৃহীত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়ায়  উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাৃদ্ধিপাচ্ছে । প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভাঙনে খুলনার উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। লবণাক্ত পানির কারণে এ এলাকার অবকাঠামো তথা রাস্তা ঘাটের ক্ষতিসাধন হয়, নষ্ট হয় ঘরবাড়ি, ফসল। ঘূর্ণিঝড় আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ গাছপালা, আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার বাসিন্দা। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকার সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । এরফলে উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে ।

উপকূলের অঞ্চলের মানুষের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় বিধস্ত খুলনাঞ্চলের উপকূলে দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় অধিকাংশ বাঁধের বেহাল দশা। জোয়ারের পানি একটু বেশি হলেই বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্লাবিত হয় ঘের ,ফসলি জমি । সংশ্লিষ্ঠ  কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি নেই। প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একটির ক্ষত পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার নতুন আঘাত হানে তাদের ওপরে অন্য কোনো ঘূর্ণিঝড়।

উপকুল বাসীর আতংকের স্থায়ী সমাধানে গত ৩০ এপ্রিল  ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের সুরক্ষায় প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ ও আশু করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপুর্ন বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মানের  দাবী জানানো হয়। নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এর আয়োজন করে।

This post has already been read 3804 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …