বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

কোকো ফলের গুনাগুন ও দেশে আবাদের সম্ভাবনা

সমীরণ বিশ্বাস : কোকো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান উপত্যাকার উদ্ভিদ। মধ্য আমেরিকায়ও চাষ হয় এ ফল। তারপর আফ্রিকার ঘানা, আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন এ ফল শুরু করে। এশিয়ার মালায়শিয়া, ইন্দ্রোনেশিয়া, নিউগিনি ও বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের ও উরিষ্যায় কোকো ফলের চাষ হচ্ছে।

কোকো গাছে ফুল ও ফল ধরতে সময় লাগে ৩-৪ বৎসর। ফুল ফলে পরিণত হয় ৬ মাসে। প্রতিটি কোকো ফলে ৩০-৪০টি সারিতে। বীজ কলাপাতায় পেচিয়ে গাজানো হয়, তার পর বীজ সংগ্রহ করে রোদে শুকারো হয়। শুকানো কোকো বীজ সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে সাশ পাওয়া যায়, যাকে বলে কোকো বীন। এই কোকো বীন থেকে অতি মূলবান কোকো গুরা বা ডাস্ট (পাউডার) তৈরী হয়। কোকো ডাস্ট (পাউডার) দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের চকলেট, মাখন, আইসক্রিম, রুটি, পুডিং, প্রসাধনী সামগ্রী ও পানীয় তৈরী করা হয়। উল্লেখ্য যে, ক্যাডবেরির চকলেট তৈরী হয় (কোকো ডাস্ট (পাউডার) দিয়ে)।

পূর্নাঙ্গ একটি কোকো গাছ থেকে প্রতি বৎসর ৩৫ কেজি বীজ পাওয়া যায় যার প্রতিকেজি কোকো চকলেট পাউডারেরে দাম ৪০ ডলার। প্রতিটি কোকো গাছ থেকে বৎসরে ১২০০ ডলার বা ৮৪ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। প্রতি বৎসর ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২ লাখ টন কোকো ফল আমদানী করা হয় যাহার মূল্য প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি কোকো গাছ আছে। এ সকল গাছ নিরবে সফলভাবে ফুল ও ফল দিয়ে যাচ্ছে।

সিসিডিবি হোপ সেন্টরেও অতি সম্প্রতি একটি কোকো গাছে অভাবনীয় কোকো ফল ধরেছে। কৃষি বিজ্ঞানিদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ু (রেইনফরেস্ট) কোকো চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত।

কোকো ফল রক্তচাপ কমায়। রক্তচাপকে প্রভাবিত করে। এটি সুখের উৎস। কোকো ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ প্রতিরোধ করে। কাশি কমায়। হার্টের জন্য ভালো। মস্তিষ্কের উন্নয়ন করে। হাড় ও দাঁত মজবুত করে। কোলেস্টেরল কমায়। ডায়বেটিস কমায়। স্বাস্থ্যকর যৌন জীবন নিশ্চিত করে। ত্বকের ভালো থাকে। এন্টিডিপ্রেসন্ট এর প্রভাব রয়েছে। নিয়মিত ঘুম হয়। এটি জ¦ালানী ডেটা। দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দূর করে। রক্ত পরিস্কার করে। ওজন হ্রাস করে। হাঁপানি কমায়। স্ট্রেস কমায়। শর্করা বজায় রাখে। পুনরুদ্বারকে সহজ করে। মুটিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। হার্ট ভালো রাখে। ক্যান্সার প্রতিরোধক। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো। কপার ঘাটতি কমায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কোকো দিয়ে ঔষধ ও প্রসাধনী তৈরী হয়। শ্বাসকষ্টের উপকার হয়। হৃদরোগে ভীষন উপকারী। ক্লান্তি দূর করে।

এ ফলের বীজ এ থেকে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং কে পাওয়া যায়।

[লেখক: কোঅর্ডিনেটর, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড সীড প্রোগ্রাম, সিসিডিবি।]

This post has already been read 4811 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …