ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা জনপ্রিয় উদ্ভিদ সজনে (মরিঙ্গা) গাছের পাতার গুড়ো-পণ্য উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা সংস্থা (বিসিএসআইআর)। প্রতিষ্ঠানটির ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার এন্ড ইনোভেশনের (আইটিটিআই) তিন বিজ্ঞানী এ উদ্ভাবনে যুক্ত ছিলেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সঠিক স্থানের পাতা সংগ্রহ করে তা ধুয়ে ধুলোবালিমুক্ত করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় শুকিয়ে সজনেপাতার গুড়া-পণ্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই গুড়াতে তাজা পাতার মতো সকল ভিটামিন, এন্টি অক্সিডেন্ট, এমাইনো এসিড ও মিনারেলস অক্ষুন্ন থাকে।
সোমবার (৭ জুন) বিকালে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে বিসিএসআইআর মিলনায়তনে এই উদ্ভাবিত গুড়োর বাজারজাতকরণে রেনেটো লিঃ এর কনজুমার প্রোডাক্টসের কনসার্ন প্রতিষ্ঠান পূর্নাভা লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এসময় বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পের প্রধান উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশে সজনে গাছ কোনও যত্ন বা পরিচর্যা ছাড়াই বড় হয়। সকল জায়গায় সজনে পাতা নিরাপদ নয় এবং এ পাতা যেকোনওভাবে শুকালে ভিটামিন, ক্লোরোফিল এবং এমাইনো এসিড নষ্ট হয়ে যায়।
রেজাউল করিম জানান, বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত এক টেবিল চামচ সজনে পাতার গুড়া শিশুদের দৈনিক অত্যাবশকীয় আমিষ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিাটমিটন চাহিদা পূরণ করতে পারে। এতে রয়েছে কমলালেবুর তুলনায় সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি, গাজরের তুলনায় চারগুণ বেশি ভিটামিন এ, দুধের তুলনায় দুই গুণ বেশি আমিষ ও চারগুণ ক্যালসিয়াম, কলার তুলনায় তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া উল্লেখ করে রেজাউল করিম জানান, প্রতিদিন এক চা চামচ সজনে পাতার গুড়ো খেলে প্রতিদিনের ভিটামিট, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলসের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়। হালকা গরম পানিতে গুড়া মিশিয়ে খেতে হবে।
চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আফতাব আলী শেখ বলেন, ‘সজনে পাতার গুড়া শরীরের ইমিউন-শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করবে।’
বিজ্ঞানীরা জানান, বিভিন্ন গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী– সজনে পাতার গুড়া লিভার, চোখ, ত্বকের রোগ প্রতিরোধ , রক্ত প্রবাহবৃদ্ধির মাধ্যমে ডায়াবেটিক ও হৃদরোগ সারাতে কাজ করে।
বিজ্ঞানী রেজাউল করিম জানান, গত দুই দশক ধরে আফ্রিকার খরাপীড়িত দেশসমূহে ইউএসএইড, ইউএনডিপিসহ কয়েকটি সংস্থা ক্ষুধা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে সজনে গাছ ও পাতার গুড়া কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তিনি আরও জানান, প্রতি বছরে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ টন সজনে পাতার গুড়া ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে রপ্তানি হয়ে থাকে।
চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সজনে-গুড়া উদ্ভাবনের তিন বিজ্ঞানী রেজাউল করিম, ড. মো. রকিবুল হাসান, দেবব্রত কর্মমকার ও রেনেটো লিঃ এর কনজুমার প্রোডাক্টসের সহযোগী ব্যান্ড প্রতিষ্ঠান পূর্নাভা লিমিটেডের এম রিনাত রিজভীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।