সোমবার , নভেম্বর ২৫ ২০২৪

সিসিডিবির ”কৃষি বন্ধু চুলা” বিতরনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

মানিকগঞ্জ: মঙ্গলবার (২৯ জুন) উলাইল গ্রামের সাজাহান মিয়ার বাড়ির উঠানে সিসিডিবি বায়োচার প্রজেক্ট কর্ম এলাকার গৃহিণীদের মাঝে ”কৃষি বন্ধু চুলা” বিতরণ করেন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানা।

বায়োচার তৈরীর নতুন প্রযুক্তি ”কৃষি বন্ধু চুলা”য় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রান্না, জ্বালানী ও সময় স্বাশ্রয়, অগ্নি দূর্ঘটনা ও বায়ু দুষন রোধ, কার্বন নিঃস্বরন কমানো এবং উৎপাদিত বায়োচার ব্যবহার করে জমির উর্বরা শক্তি, অনুজীব বৃদ্ধি, লবনাক্ততা হ্রাস এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ভূমিকা রাখেন বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। অপরদিকে ”কৃষি বন্ধু চুলা” থেকে যে বায়োচার উৎপাদিত হবে তা বিক্রি করে ব্যবহারকরীর পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন হবে এবং বায়োচার জমিতে ব্যবহারের ফলে মাটির উন্নয়নের পাশাপাশি ফসল বৃদ্ধি পাবে। মানিকগঞ্জে সিসিডিবি বায়োচার প্রকল্পের কর্ম এলাকায় ”কৃষি বন্ধু চুলা” ও বায়োচার ব্যবহার নিয়ে কৃষক কৃষানীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সিসিডিবি বায়োচার প্রকল্পের উদ্যোগে উলাইল কর্ম এলাকায় ৬ জন ”কৃষি বন্ধু চুলা” ব্যবহার করতে আগ্রহী এমন গৃহিণীদের নিয়ে”কৃষি বন্ধু চুলা” স্থাপন বিষয়ক এক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় এবং উক্ত প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মাঝে চুলা বিতরন করা হয়। প্রশিক্ষণ সঞ্চালনায় ছিলেন সিসিডিবি বায়োচার প্রজেক্টের মার্কেটিং অফিসার মোঃ আবু সুফিয়ান। প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন  প্রবীন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এটিএন নিউজ এর সিনিয়র রিপোর্টার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, ডেইলী নিউ নেশন এর সিনিয়র রিপোর্টার মোঃ ইউনুস আলী, উলাইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান, উলাইল ইউনিয়ন সংরক্ষিত ৪,৫ ও নং ওয়ার্ড মেম্বার মিসেস সেলিনা আক্তার, বৈশাখী টেলিভিশন এবং দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মোঃ মারুফ হোসেন, এস.এ. টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মোঃ সোহেল রানা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সিসিডিবি বায়োচার প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ।

এ সময় কৃষি কর্মকর্তা বলেন ‘কৃষি বন্ধু চুলায়’ রান্না করে নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়। অতিরিক্ত বাই প্রোডাক্ট হিসেবে যে বায়োচার পাওয়া যায় তা  বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। বায়োচার মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির কার্বন বা জৈব উৎপাদান বৃদ্ধি পায়, লবনাক্ততা হ্রাস করে, পানি ধারন ক্ষমতা বাড়ে, রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় ফলে কম সার ব্যবহার করেও আশানুরুপ ফসল পাওয়া যায়, পুষ্টি উৎপাদান ধরে রাখে, মাটির বিষাক্ত পদার্থ ফসলে আসতে দেয় না, মাটিতে অবস্থানকারী অনুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। বায়োচার ব্যবহার বৃদ্ধি জন্য সিসিডিবির কৃষি বন্ধু চুলা বাজারজাতকরণ খুব দরকার। কৃষি বন্ধু চুলার ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে বেশি বায়োচার উৎপাদন হবে ও তা কৃষি জমিতে ব্যবহার করা যাবে। বায়োচার ব্যবহার করে কৃষকগণ বেশী ফসল পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

সমাপনী বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন সিসিডিবি’র উদ্যোগে ”কৃষি বন্ধু চুলা” বিতরন একটি সময় উপযোগি পদক্ষেপ। এই চুলায় যেহেতু বার বার খড়ি ঠেলতে হয় না তাই রান্না বসিয়ে গৃহিণীরা তাদের পরিবারের অন্যান্য কাজগুলি করতে পারে। রান্নার সময় প্রচলিত চুলার তুলনায় ৪০% খড়ি কম লাগে তাই গাছ কম  কাটা পড়ে, ধোঁয়া বায়োচারের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং কার্বন নিঃস্বরন কম হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনে এই ”কৃষি বন্ধু চুলা” অতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এই চুলায় উৎপাদিত বায়োচার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করবেন এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি রান্নাকালিন সময় মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়  (ধোঁয়া মুক্ত) ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন বলে সহমত পোষন করেন।

এ প্রসঙ্গে সিসিডিবির বায়োচার প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর সমীরন বিশ্বাস বলেন, বায়োচার এক ধরনের চার বা কয়লা যার মধ্যে শতকরা ৩০-৫৫ ভাগ কার্বন থাকে। এ কয়লা এক ধরনের চুলা (কৃষি বন্ধু চুলা) ৩০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্বল্প অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এবং পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে বায়োমাস (কাঠ, খড়-কুটা এবং কৃষি বজ্য) পুড়িয়ে বায়োচার তৈরী করা হয়।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সিসিডিবি’র বায়োচার প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে বায়োচার ব্যবহারকারী কৃষকের জমিতে ডেমো স্থাপন, বায়োচারের কার্যকারিতা পরীক্ষণ ও বায়োচার ব্যবহার এবং গবেষনা কাজের সাথে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট, হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পৃক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ICCO এবং Kerk in actie এর আর্থিক সহায়তা ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় ”খ্রীষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ” (সিসিডিবি) মাঠ পর্যায়ে বায়োচর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করছে। বায়োচার প্রকল্পের শিবালয় কর্ম এলাকায় ১২০টি পরিবার ”কৃষি বন্ধু চুলা” ব্যবহার করছেন এবং চলতি অর্থ বছরে সিসিডিবি বায়োচার প্রল্পের মাধ্যম অত্র শিবালয় কর্ম এলাকায় আরও ২৫০টি পরিবারে ”কৃষি বন্ধু চুলা” স্থাপন করা হবে যা পর্যায়ক্রমে স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ব্যবহারকারীগণ ”কৃষি বন্ধু চুলা” থেকে উৎপাদিত বায়োচার বিক্রি করে  আর্থিকবাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজের জমিতে বায়োচার ও কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করে অধিক ফসল ঘরে তুলছেন।

This post has already been read 2889 times!

Check Also

ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভ্যাব) এর বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামলীগের বিদায়ের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে …