মাহফুজ নান্টু: বর্গাচাষি জীবন মিয়া। কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর গ্রামের বাসিন্দা। তার জমিতে আউশ ধান পেকে আছে। ৪ মেয়ে ১ ছেলের জনক তিনি। অন্যের জমি চাষ করা ছাড়াও যখন যে কাজ পান করেন। বলা যায় দিন মজুর। কাজ করে খান।
গতকাল বিকেলে কত স্বপ্ন নিয়ে জমিতে ধান কাটতে গেলেন। এ ধান থেকে চাল করবেন। আগামী মাস ছয়েক আর ভাতের জন্য চিন্তা করতে হবে না। আরো কত্ত কি স্বপ্ন দেখতে দেখতে জমির পাশে গিয়ে হাজির হন । আইলের উপর দাড়িয়ে পুরো জমির উপর চোখ বুলিয়ে নেন। জমিতে ধানও ভালো হয়েছে। তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠে জীবন মিয়ার মনে।
জমির উপরে ঝুলে ছিলো পল্লীবিদ্যুতের তার। জীবন মিয়া ধান কাটা শুরু করলেন। হঠাৎ করেই বিদ্যুতের তার পিঠে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন। ধান কাটতে গিয়ে জীবনটাই দিয়ে এলেন কৃষক জীবন মিয়া।
পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএমকে যখন ফোনে দিয়ে বললাম, আপনাদের অবহেলায় কৃষক জীবন মিয়ার করুন মৃত্যু হলো। তখন তিনি বললেন, দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। এটাতো আপনাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। জীবন মিয়ার পরিবারে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো তার কি হবে। ব্যস্ততার অযুহাতে তিনি ফোন রেখে দিলেন।
বিকেলের সোনালী রোদ, মাঠের সোনালী ধানের ছড়ায় লাগে। দখিনা বাতাসে দোল খায়। পাশে কৃষক জীবন মিয়ার লাশ পড়ে থাকে। তিনি বুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন তার সোনালী ধান। বুকের মাঝে স্বপ্ন চেপে ধরেই শেষ নিঃশ্বাস নিলেন। তখনও কোথাও কেউ নেই…