রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

ইউটিউবে রঙবেরঙ -এর থাম্বনেইল আর টাইটেলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন নতুন খামারিরা

কৃষিবিদ এজাজ মনসুর: “৫ টি মুরগি থেকে ২০০ টির মালিক কিংবা ৫ হাজার দিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজকে লাখপতি” ভিউয়ার্স বাড়াতে এমন টাইটেল আর থাম্বনেইল ব্যবহার করে তারা সফল হলেও ক্ষতির সম্মুখীন বা আশংকায় ক্ষুদ্র খামারিরা।

প্রায় প্রতিটা ভিডিওতে এমন কিছু তথ্য থাকে যা নতুনদেরকে খামারি হতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু এসব তথ্যের সাথে বাস্তবতার মিল না থাকার কারণে খামারিরা লসের সম্মুখীন হচ্ছেন। ভাইরাল হওয়ার প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা আর ইনকামের উদ্দেশ্য মূখ্য হওয়ার কারণে, ভিডিওর মান যতটা তথ্য সমৃদ্ধ ও তথ্যের সত্যতা থাকা দরকার সেটা থাকছে না। একই খামারিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েকটি চ্যানেল কয়েকভাবে উপস্থাপন করছে। খামারিদেরকে প্রমোট করার জন্য তাদের নাম, ফোন নাম্বার ভিডিওতে ব্যবহার করছেন। এর ফলে খামারিদের মাঝেও তাদের ব্যবসা রমরমা ও সেলিব্রেটি হওয়ার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

ভিডিওটে যতটা না উপকারী তথ্য থাকে তারচেয়েও বেশি অপকারী বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বেশি থাকে। একজন নতুন খামারি জানেন না ব্রুডিং কি, তখন মুরগির কি ধরনের ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন, জানেন না প্রোডাকশন পিরিয়ডে আসার আগের ও পরের ম্যানেজমেন্ট কেমন হওয়া দরকার।

অনেক অভিজ্ঞ খামারিও জানেন না, কমার্শিয়াল উদ্দেশ্যে খামারি হতে হলে তাকে সেই সেক্টর সম্পর্কে কতটুকু বেসিক জ্ঞান রাখা দরকার, বরং তিনি যখন নতুনদেরকে গাইড করেন তখন উভয়ের জন্য এটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

শুধু ইউটিউব চ্যানেল নয়, ফেইসবুকে এমন অসংখ্য গ্রুপ তৈরী হয়েছে যেখানে নতুনরা যুক্ত হচ্ছেন খামার সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য। সেই সকল গ্রুপগুলোর এডমিন মডারেটর থাকেন এমন সব ব্যক্তিরা যাদের, ইউটিউবে চ্যানেল আছে কিংবা একদিন বা বিভিন্ন বয়সী বাচ্চার ব্যবসা করে থাকেন।

সমস্যা হলো- উনারা প্রান্তিক খামারিদের পাশে থাকার কথা বলে যেসকল সাজেশন দিয়ে থাকেন এগুলোতে কিছুটা উপকার হয়ে থাকলেও ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন ধরুন, মুরগি অসুস্থ না হলেও বা কোনো লক্ষণ না থাকলেও ব্রুডিংয়ে ব্রডস্পেক্ট্রাম এন্টিবায়োটিকসহ একগাদা মেডিসিন ব্যবহার করার জন্য বলে থাকেন। এভাবে যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও ডোজ ঠিক মতো ব্যবহার না করার কারণে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং পরবর্তীতে ওই এন্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। আবার অনেক পুরাতন খামারি নতুনদেরকে অল্প খরচে ফীড বানানোর নানা ফর্মুলা দিচ্ছেন যেখানে যে বয়সে যে পরিমাণ এনার্জি, প্রোটিন থাকা দরকার তা ঠিক থাকছে না। ফলে আল্টিমেটলি খামারি প্রোডাকশন কম পাচ্ছেন।

মূলত, একদিনের বাচ্চা বিক্রি করার চিন্তার ফলে লাভের অংকের হিসেবটা বেশি হলেও বাচ্চার কোয়ালিটি, মর্টালিটি, পার্ফরম্যান্স ভালো হচ্ছে না। কারণ, এগুলা ভালো পেতে হলে যে বয়সে যে ধরনের ম্যানেজমেন্ট জানা দরকার তারা সেটা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এতোই যদি লাভ হতো তাহলে প্রায় প্রতিটি ইউটিউবাররা নিজেরাই সেই ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে যেতেন। কয়েকটা ভিডিও দেখে যদি খামারি সব জানেন, এমন ধারণা করতে পারেন সেখানেতো ইউটিউবাররা অনেক বেশি জানতেন; কারণ, তারা সশরীরে এসব সামনে থেকে দেখে, শুনে আসেন। কিন্তু বাস্তবে আসলে সেটা হচ্ছে না বরং অনেক খামারি লসের কারণে ফার্ম গুটিয়ে এখন চ্যানেল খুলে নামছেন ইউটিউবার হতে। এসব কর্মকান্ড দিনশেষে লাইভস্টক সেক্টরকে নেগেটিভলি হাইলাইট করছে।

বলছি না, সব ইউটিউবাররা এসব করেন তবে অনেকেই করে থাকেন। তাদেরকে মনে রাখা জরুরী অনলাইন প্লাটফর্ম সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার কারণে এখানকার একটা তথ্য কতগুলো মানুষ দেখবে তা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন। তাই যারা এসব ভিডিও তৈরী করছেন তাদেরকে তথ্যের সত্যতা ও মান সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে এসব প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিত নতুবা একটা সময় তাদের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।

লেখক : ফার্ম এক্সিকিউটিভ, কাজী ফার্মস গ্রুপ।

This post has already been read 4504 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলতায় দরকার  “জাতীয় পোল্ট্রি বোর্ড” গঠন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আন্ত:মন্ত্রনালয়, আন্ত:অধিদপ্তর  এবং উৎপাদন ও বিপননে ডজনের উপরে …