চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: দেশের ক্ষুদ্র খামারিরা তৃতীয় পক্ষ মধ্যসত্বভোগীদের মাধ্যমে পোল্ট্রি মুরগী বিক্রি থাকেন। ফলে খামারি পর্যায়ে প্রতি কেজি মুরগীর দাম খামারি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ব্যবধান থাকে। ফলে খামারিরা একদিকে তাদের পণ্যের ন্যয্যমূল্য পায় না। অন্যদিকে ভোক্তারা বেশি দামে মুরগি কিনতে বাধ্য হন। সেক্ষেত্রে খামারিদের থেকে সমবায় ভিত্তিতে সরাসরি মুরগী ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নগরীর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত লার্নিং শেয়ারিং ওয়ার্কশপ অন ফুড সেফটি গর্ভানেন্স ইন পোল্ট্রি সেক্টর এ উপরোক্ত মতামত ব্যস্ত করা হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জসিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসম জামশেদ খন্দকার, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ।
সভায় বক্তারা বলেন, সবার জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিতে খামারিদের উৎপাদন থেকে শুরু করে গৃহিনীর খাবার পরিবেশন পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের প্রতিটি ধাপকে সঠিকভাবে অনুসরন করা না হলে নিরাপদ খাবারও অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে। তাই সরকারের ভেজাল খাদ্য রোধে মান তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থাগুলির মাঝে আন্তঃসমন্বয় জোরদার করতে হবে। এর পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে শিক্ষা ও সচেতনতায় বিনিয়োগ বাড়ানো না হলে ভোক্তারা মানসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য ক্রয় করতে পারবে না। আর এজন্য ভোক্তা, ব্যবসায়ী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কোনভাবেই সে উদ্যোগ সফল হবে না। কারন জেলা প্রশাসন, ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর বা র্যাবের অভিযানের পর যে সমস্ত হোটেল রেস্তোরাকে জরিমানা করা হচ্ছে, পরের দিনই ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ঐ হোটেলে। অনেক সময় অভিযানের পর হোটেলের বিক্রি আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা হলে ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রির উৎসব বন্ধ করা যাবে।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের স্বাগত বক্তব্যে ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাবেক জেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ও নাহার এগ্রোর মহাব্যবস্থাপক ডা. আবদুল হাই, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি, চট্টগ্রাম ডায়বেটিক জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতার লিপি, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের রসায়নবিদ উত্তম কুমার রায়, বিভাগীয় তথ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজিজুল হক নিউটন, বিএসটিআই এর সহকারী পরিচালক শশীকান্ত দাশ, চট্টগ্রাম চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ন সচিব নুরুল আবচার, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুস সুলতানা, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির, মুক্তিযোদ্ধা, কর্নফুলী ও পরিবেশ গবেষক ডঃ ইদ্রিস আলী, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুল হায়দার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ একরাম উদ্দীন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল মনসুর, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব সালামত আলী, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রেখা আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগর সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব পাঁচলাইশের সেলিম জাহ্ঙ্গাীর, চট্টগ্রাম পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মোহাম্মদ হাসান, বন গবেষনাগার শারিরীক শিক্ষা কলেজের প্রভাষক এবিএম হুমায়ুন কবির, লিও জেলা চেয়ারম্যান ডা. মেজবাহ উদ্দীন তুহিন প্রমুখ। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর তাজমুন নাহার হামিদ।
সভাপতির বক্তব্য অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, একজন লোকের খাদ্য গ্রহনের ওপর ভিত্তি করে জানা যায় লোকটি আর্থিক স্বচ্চলতা। নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে সরকারী তদারকি সংস্থাগুলির আন্তঃসমন্বয়ের দুর্বলতার কারনে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বারবার জরিমানার মুখে পড়েন। আবার অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাই খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ভোক্তা, উৎপাদনকারী ও বাজারকারী প্রতিষ্ঠান সমুহের মাঝে কার্যকর সমন্বয় জোরদার করা দরকার। ক্যাবের মতো নাগরিক নজরদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহনের ওপর জোর দেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন সরকারের নানামুখি উদ্যোগে কৃষি, প্রানিসম্পদ ও মৎস্যখাতে ব্যাপক সফলতা এসেছে। যার কারনে দেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তবে এখন প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এজন্য সকলের জন্য ভোক্তা অধিকার শিক্ষা ও সচেতনতা জোরদার করার আহবান জানান।
সভায় আরো বলা হয়, ভোক্তাদের সচেতনতার অভাব ও আইন প্রয়োগে শিথীলতার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পুরো খাদ্য ব্যবসাকে ভেজালের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করেছেন। যার কারনে ব্যবসায়ীরা এখন বেপরেয়া, সরকারের অনেক নিয়মকানুনকে তারা এখন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অনেক জায়গায় অসহায় ও দায়িত্ব এগিয়ে চলার নীতি গ্রহন করেন। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হচ্ছে এবং ভোক্তা অধিকার ভুলন্টিত হচ্ছে প্রতি পদে পদে। যার চুড়ান্ত পরিনতি ই-কর্মাসের নামে হাজার হাজার কেটি টাকা লুপাটের মতো ঘটনা। সরকারের সংস্লিষ্ঠ দপ্তরগুলি যদি আগে থেকেই এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না।এখন লক্ষ লক্ষ গ্রাহক তাদের সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত।
সভায় বলা হয় যত্রতত্র, অপরিস্কার, অপরিছন্ন স্থানে মুরগি জবাই করে ভোক্তার কাছে মুরগি সরবরাহ করার কারনে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি পেতে হলে ফ্রোজেন (প্রক্রিয়াজাতকৃত) মুরগির বিকল্প নেই। আবার সুপারশপ গুলিও তাদের ভেন্ডরদের মাধ্যমে যে সমস্ত উৎস থেকে মুরগি কিনে থাকেন, তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত কিনা তা জানা অনেক জায়গায় সম্ভব হচ্ছে না। তাই সুপার শপগুলিতে বায়োসিকিউরিটিযুক্ত, প্রাণীসম্পদ অফিসের সনদপ্রাপ্ত, যথাযথ মান পরীক্ষা নিশ্চিত করে বাজারজাতকৃত মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ড্রেসড (প্রক্রিয়াজাতকৃত) ব্রয়লার মুরগি বাজারজাতকরণ জনপ্রিয় করতে হবে। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, খামারি, ব্যবসায়ী ও ক্যাব সদস্য/সদস্যাসহ ৬০জন অংশগ্রহনকারী অংশ নেন।