শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু  – শ ম রেজাউল করিম

খুলনা সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন “ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। দুই দেশের কিছু অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। অভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আদর্শের ক্ষেত্রে দুদেশের অনেক ভালো অবস্থান রয়েছে। আমাদের এক কোটি জনগণকে আশ্রয় দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের জনগণ অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। শুধু তাই নয় আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষার্থে ভারতের তৎকালীন সরকার প্রধান ইন্দিরা গান্ধী বিশ্ব পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যতদিন থাকবে ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কোনভাবেই বিনষ্ট হবে না”।

বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, খুলনায় বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় দেশের অমিমাংসিত বিষয়সমূহ অচিরেই সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন

ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ভারতীয় হাই কমিশন, ঢাকা, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন, খুলনা, বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিববর্ষ , মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতজন্মবর্ষ এবং ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুই দেশের সরকারের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও কর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনী আয়োজন করা হচ্ছে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এমন জগলুল হায়দার অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।

ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার, খুলনা রাজেশ কুমার রাইনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, খুলনা বিএল কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আতিকুজ্জামান প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, “বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি আমি দুদেশের কিছু অমিমাংসিত বিষয় উল্লেখ করতে চাই। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ দুদেশের মধ্যে অন্যান্য অমিমাংসিত বিষয় আমরা অবশ্যই সমাধান করতে পারবো। ইতোমধ্যে আমরা দুদেশের স্থলসীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সমস্যা সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে পেরেছি”।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “বাঙালি জাতির ইতিহাসের সম্পদ হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর ভারতবর্ষের ইতিহাসের মহানায়ক মহাত্মা গান্ধী। উভয়ের মধ্যে অসাধারণ সাদৃশ্য রয়েছে। মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন-সার্বভৌম করার জন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিতে পরিণত করার জন্য আইনানুগ প্রক্রিয়ায় লড়াই করেছেন।জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। অন্যথায় যার যা কিছু আছে তা নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার কথা তিনি বলেছেন। অপরদিকে মহাত্মা গান্ধী আফ্রিকা থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে অহিংস বাণীর কথা যেভাবে প্রচার করেছিলেন, সে দর্শন ছিল বিস্ময়কর। তাই বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীত শুধু ছবি দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে গভীরে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর জীবনালেখ্য জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ও দেশপ্রেমের কথা বুঝতে হবে”।

তিনি আরো বলেন, “আজ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক একটা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারত অসাম্প্রদায়িকতা প্রাধান্য দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম বিষয় হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার কথা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার একই উচ্চারণ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন বঙ্গবন্ধুর মতো নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর এ উপমহাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে”।

“আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর যে লক্ষ্য ছিল, যে দর্শন ছিল, যে বিশ্বাস ছিল, মানবকল্যাণে আত্মোৎসর্গের জন্য তাদের যে রাজনীতি ছিল সে রাজনীতি হোক আমাদের পাথেয়। আর যখনই বাংলাদেশ কিংবা ভারত প্রান্তে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, শান্তির পৃথিবী নির্মাণের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো”-যোগ করেন মন্ত্রী।

বাংলাদেশের উন্নয়নসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে ভারতের চমৎকার ভূমিকার কথা স্মরণ করে মন্ত্রী আরো বলেন, ” আমরা পরস্পরের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারণ করবো। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিসহ অভিন্ন সীমান্ত, অভিন্ন পানি আমরা সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করছি। এই ধারা অব্যাহত রেখে ভারত ও বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্প্রীতির অনন্য উদাহরন হিসেবে তুলে ধরতে হবে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয় বরং সমগ্র বিশ্বে যৌথভাবে নেতৃত্বের আসনে উভয় দেশকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে”।

পরে মন্ত্রী জেলা শিল্পকলা একাডেমি খুলনায় বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

This post has already been read 2723 times!

Check Also

ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভ্যাব) এর বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামলীগের বিদায়ের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে …