বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

আমদানি নির্ভরতা কাটাবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ “বিপ্লব”!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজ-আমাদের দেশীয় রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। তবে এর ঝাঁঝ মাঝেমধ্যেই রান্নাঘর থেকে রাজনীতির মাঠ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ায়। পেঁয়াজ তখন হয়ে উঠে কৃষি অর্থনীতি থেকে কূটনীতির অন্যতম হাতিয়ার। এর অন্যতম কারণ, পেঁয়াজে এখনো আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। তবে সুখের খবর নিয়ে এসেছে দেশের কৃষি সেক্টরের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি এসিআই সীড লিমিটেড। নাহ্, কোম্পানীটি পেঁয়াজ আমদানির কোন এলসি দেয়নি; বরং বাংলাদেশ যাতে আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে সে উদ্যোগে নিয়েছে। পেঁয়াজে বিপ্লব ঘটাতে নিয়ে এসেছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত ‘বিপ্লব’।

“দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এসিআই গেলো দুই-তিন বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযোজন পরীক্ষার মাধ্যমে “বিপ্লব” নামে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় গ্রীষ্মকালীন একটি পেঁয়াজের জাত নির্বাচন করে, যার হেক্টর প্রতি ফলন ৩০-৩২ মেট্রিক টন, অথচ দেশে পেঁয়াজের গড় ফলন ১০.৮২ মেট্রিক টন/হেক্টর। “বিপ্লব” উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক বৃষ্টি সহনশীল জাত,  যা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। জাতটি চারা লাগানোর ১০০-১১০ দিনের মধ্যে উত্তোলন করা যায়। এটি রোগবালাই সহনশীল, উচ্চ ফলনশীল একটি জাত যা চাষ করলে একদিকে কৃষক যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোও সম্ভব হবে।”  বলে জানিয়েছে এসিআই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত “বিপ্লব” এর প্রদর্শনী প্লটে ফলন সারাদেশের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কৃষক ফরজ আলীর মাঠে এসিআই সীড এর প্রদর্শনী প্লটে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত “বিপ্লব” এর বাম্পার ফলন হয়েছে এবং সেখানকার অন্যান্য কৃষকেরা পেঁয়াজটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এ সম্পর্কে এসিআই এগ্রিবিজনেস -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারী এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন,  দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ মেটিক টন। সেখানে আমাদের দেশে পেঁয়াজের মোট উৎপাদন ২৫-২৭ লাখ মেট্রিক টন; ফলে ঘাটতি থেকে যায় ৮-১০ লাখ মেট্রিক টন যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

“পেঁয়াজের এ ঘাটতি থাকার মূলত দুটি কারণ, ১. পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার মতো পর্যাপ্ত স্টোরেজ নাই; এবং ২. আমাদের দেশে পেঁয়াজ কেবল একটি সীজন বা শীতকালে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আবার পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলেও এতে ফাঙ্গাস পড়ে পচে নস্ট হয়ে যায়। তারমানে, এটি সংরক্ষণের চেয়ে উৎপাদন বাড়ানোটাই সহজ সমাধান। আবার এজন্য খুব বেশি জমিরও প্রয়োজন নেই; মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করলেই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো আমদানি নির্ভরতা। এসব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত “বিপ্লব” আমরা বাজারে নিয়ে এসেছি; যেটির ঝাঁঝ দেশীয় পেঁয়াজের মতোই কিন্তু উৎপাদন প্রায় তিনগুণ! সুতরাং, পেঁয়াজ উৎপাদনে স্ব-নির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ “বিপ্লব” চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।” -যোগ করেন ড. আনসারী।

সারাদেশে পেঁয়াজটি চাষ ও সম্প্রসারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা চেয়ে ড. আনসারী বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ “বিপ্লব” চাষ আমাদের আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় করবে তেমনি কৃষককে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান করে তুলবে।

উল্লেখ্য, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত “বিপ্লব” মূলত বহুজাতিক কোম্পানি ইষ্ট ওয়েষ্ট সীড ইন্টারন্যাশনাল থেকে আমদানিকৃত, এসিআই সীড লিমিটেড বাংলাদেশে যার একমাত্র পরিবেশক।

This post has already been read 3916 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …