বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

রঙ ও গন্ধের কারণে রপ্তানি বাজার হারাচ্ছে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া -ড. এফএইচ আনসারী

শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে “জাতীয় মৎস্য কংগ্রেস ও FOAB সম্মাননা ২০২২” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশন -এর চেয়ারম্যান ড. এফএইচ আনসারী।

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে হোয়াইট ম্যাসল ফিলে পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়ার ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রঙ ও গন্ধের কারণে রপ্তানি বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া- মন্তব্য করেছেন এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশন -এর প্রেসিডেন্ট  ড. এফএইচ আনসারী। তিনি বলেন, আদর্শ পুকুর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূর্গন্ধ মুক্ত তেলাপিয়া উৎপাদনে ও হোয়াইট ম্যাসল ফিলে পাঙ্গাস উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে এফসিআর উন্নত করার মাধ্যমে আমাদের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে মনোনিবেশ এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। কৃষির সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির বিচরন করতে হবে।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে “জাতীয় মৎস্য কংগ্রেস ও FOAB সম্মাননা ২০২২” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফিসফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (FOAB) উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটির কারিগরি সহযোগি হিসেবে ছিল মৎস্য অধিদপ্তর ও ফিসারিজ প্রোডাক্ট বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এফপিবিপিসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়াতে ফিডের দাম কমানো যাচ্ছে না, এ সময় উল্লেখ করেন ড. আনসারী।

বিশিষ্ট মৎস্যবিদ, সীফুড হ্যাচাপ ও গ্যাপ বিশেষজ্ঞ, ডিপ সী ফিসার্স লিমিটেড (র‌্যাংগস গ্রুপ) -এর পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক -এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং সিনিয়র মেরিন এডভাইজর (ডব্লিউসিএস) ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান। আলোচক হিসেবে ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক কাঁকড়া ও কুচিয়া প্রকল্প পরিচালক ড. বিনয় কুমার চক্রবর্তী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মৎস্য উন্নয়ন ও সমবায় ব্যাক্তিত্ব, ফোয়াব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা শামসুর রহমান শাহীন। অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষ ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য  মৎস্য সম্প্রসারণ ও গবেষণায় ৩ জন, মৎস্য সাংবাদিকতায় ২ জন ও  সফল মৎস্য উদ্যোক্তায় ৪ জনকে FOAB সম্মাননা প্রদান করা হয়।

আমাদের দেশে যত স্ট্রীট ফুড আছে তার খুবই সামান্য অংশে মাছের ব্যবহার রয়েছে, উল্লেখ করে ড. আনসারী বলেন- স্ট্রীট ফুড সেলারদের কাছে আমাদের মাছ তুলে দিতে হবে।  মৎস্য রপ্তানির পাশাপাশি ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্ট যেমন- ফিশ ফিংঙ্গার, ফিশ চিপস, ফিশ বল, ফিশ সস, ফিশ সুপ, ফিশ নুডলস ইত্যাদি তৈরির পাশাপাশি মানুষের কাছে এসব পণ্যের চাহিদা তৈরি করতে হবে। দেশে ও দেশের বাহিরে সমানভাবে বিভিন্ন স্ট্রিট ফুড সপ, রেস্টুরেন্ট সহ ভোক্তা প্লেটে এই ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্টগুলোর চাহিদা বাড়াতে হবে। এই ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্টগুলোর প্রচার ও প্রসার বাড়লে মৎস্য থেকে প্রাপ্ত উপজাত হতে ফিশ মিল, ফিশ ওয়েল, লিভার ওয়েল, আইজিং গ্লাস, পার্ল এসেন্স তৈরির সুযোগ আমাদের দেশে তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

মৎস্য চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, উপযুক্ত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মাছের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে। উদাহর স্বরূপ ভিয়েতনামে পাঙ্গাস -এর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২৪ মেট্রিক টনের বেশি, তেলাপিয়ার উৎপাদন ১২ মেট্রিক টনের বেশি এবং চিংড়ির উৎপাদন  ১৩ মেট্রিক টনের বেশি। আমাদের উপযুক্ত প্রযুক্তি প্রয়োগ ও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সম্প্রসারণ কর্মী, ইনপুট সেলার, মিডিয়া অনেক ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। কারণ, আমাদের দেশে মিডিয়ার পদচারনা অনেক বেশি।

“মৎস্য উৎপাদনে যেহেতু সবচেয়ে বেশী খরচ মূলত হয় খাদ্য ব্যবস্থাপনায়; সেখানে আমাদের দেশে কোন কোন মৎস্য খামারি পাঙ্গাশ উৎপাদনে FCR পাচ্ছে ১.২ থেকে ১.৩ আবার তেলাপিয়া উৎপাদনে FCR পাচ্ছে ১.১ থেকে ১.২। একইভাবে যদি অন্যরা উৎপাদন Repeat করতে পারতো ও উন্নত FCR পেত তবে উৎপাদন খরচ কম ও মৎস্য চাষে সকলেই লাভবান হতে পারতো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বিগত ১০ বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তথা মৎস্য খামারিদের নিবিড় পরিচর্যা, অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে। দেশে মৎস্য উৎপাদন যে হারে বাড়ছে তাতে করেন অতিশীঘ্রই আমরা উদ্বৃত্ত থাকবে এবং এই সেগুলো উৎপাদন রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানির জন্য নিরাপদ মৎস্য চাষ ও গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে। আমাদের শুধু মৎস্য উৎপাদন বাড়ালেই চলবে না, সেগুলো দিয়ে ভ্যালু এডেড পণ্য তৈরি করতে হবে।

“মৎস্যচাষে আমাদের আজ অবধি যে বৃদ্ধি হয়েছে তা মূলত Surface Area Expansion, বিশেষ করে পুকুরে মাছ চাষ সম্প্রসারনের মাধ্যমে হয়েছে। এখন আমাদের কিভাবে ভিয়েতনামের মত মোহনায় PEN/Cage culture করা যায়, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করা যায় এবং কাঁকড়া মোটাতাজাকরণকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিভাবে লাভবান করা যায় তার জন্যে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তার যথাযথ সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে হবে। চিংড়ির ক্ষেত্রে ফার্মিংকে কিভাবে আধা নিবিড় থেকে নিবিড় এবং নিবিড় থেকে  অতি নিবিড় করা যায়, পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি এর চাষ সম্প্রসারণ বিষয়ে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের লবণ খামারে, আর্টিমিয়া সিস্ট এবং বায়োমাস উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সফলতা লাভ করেছে। সেই আলোকে আর্টিমিয়া ফর বাংলাদেশ প্রকল্পের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে লবণ চাষিদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতিতে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে যাব। এক্ষেত্রে মৎস্য অধিদপ্তর ও বেসরকারি খাতকে একত্রে কাজ করতে হবে” যোগ করেন ড. আনসারী।

বাংলাদেশে আধুনিক মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ ও মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে আমরা অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছি, উল্লেখ করে তিনি বলেন- রাজশাহীতে যৌথ উদ্যোগে আমরা বাংলাদেশে অত্যাধুনিক ও সর্ববৃহৎ মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছি, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে অত্যাধুনিক শ্রিম্প প্রসেস প্লাণ্ট স্থাপন করেছি এবং আমরা বিগত ১৩ মাসে ১৩৮ কন্টেইনার চিংড়ি রপ্তানি করতে পেরেছি, এর পরিমান আরও বাড়বে যদি আমরা নিরবছিন্ন Quality RM নিশ্চিত করতে পারি। মৎস্যবিজ্ঞানে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি হিসেবে আমরা “রূপালী” নামের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি, SMART Aquaculture Implements নামক পোর্টফোলিও এর মাধ্যমে Automated Fish Feeder (Both AC & DC), Digital Microscope, Aerator নিয়ে কাজ করছি, মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ ও মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে আমরা পুকুর ব্যবস্থাপনা, হাইজিন, ডেভেলপমেন্ট ও ইনোভেটিভ সলিউশন সরবরাহ করে আসছি।

This post has already been read 5460 times!

Check Also

প্রশিক্ষিত হয়ে ক্যাডেটরা হতে চলেছে গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় কান্ডারী- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে …