বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায় যে ৯টি মৌলিক ধারণা থাকা আবশ্যকীয়

ডা. মো. . ছালেক : ব্যবসা শুরু করার আগে যে কোন উদ্যোক্তাকে কতগুলো মৌলিক ধারণা পরিষ্কার করে নেয়া একান্ত প্রয়োজন বা আবশ্যকীয়। তা না হলে উদ্যোক্তার পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র বিচারে ভুল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। নিম্নে বিশেষ প্রয়োজনীয় কিছু মৌলিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হলো-

১. বিনিয়োগ : বিনিয়োগ হলো যখন কোন অর্থ বা টাকা আয় বা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে লাগানো হয়।

২. উৎপাদন : বিনিয়োগকৃত পুঁজির ব্যবহার করার মাধ্যমে কোন পণ্য বা দ্রব্য তৈরি করাকে উৎপাদন বোঝানো হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে যেসব জিনিসের প্রয়োজন হয় তাদের প্রতিটিকে উৎপাদনের একেকটি উপাদান বলা হয়।

যেমন ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় জায়গা, যন্ত্রপাতি,  ব্রয়লার বাচ্চা, খাদ্য, টিকা, ঔষধ সামগ্রী, শ্রম, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোক্তার উদ্যোগ।

৩. পুঁজি : জমি, ব্রয়লারের ঘর, নগদ টাকা, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি যা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তাই পুঁজি বা মূলধন। উৎপাদনে ব্যবহৃত মোট পুঁজিকে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ স্থায়ী মূলধনঃ জমি, ঘর, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি যেসব জিনিস উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও আরেক উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ স্থায়ী ঘর, গুদাম ও যন্ত্রপাতি হল স্থায়ী মূলধন। চলতি মূলধনঃ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন- ব্রয়লার বাচ্চা, খাদ্য, টিকা, ঔষধ সামগ্রী, শ্রম ইত্যাদি যেগুলো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় এবং বাজারজাত হওয়ার পর বিক্রয়লব্ধ টাকা উদ্যোক্তার কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত যাবতীয় খরচকে একত্রে চলতি মূলধন বলে।

৪. স্থায়ী খরচ : উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যেসব খরচ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী হয়, সেসব খরচকে স্থায়ী বা অপরিবর্তনশীল খরচ বলে। যেমন ঘর ভাড়া, মাসিক বেতন ইত্যাদি। উৎপাদনে কম হোক বা বেশি হোক, এসব খরচের তাতে কোন বেশি-কম হবে না।

৫. অস্থায়ী বা পরিবর্তনশীল খরচ : উৎপাদনের পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে খরচের আনুমানিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে সেসব খরচকে পরিবর্তনশীল খরচ বলে। যেমন কাঁচামাল বেশি পরিমাণ উৎপাদন করলে বেশি পরিমাণ কাঁচামাল খরচ হবে; আবার কম পরিমাণ উৎপাদন করলে কম পরিমাণ কাঁচামাল খরচ হবে।

৬. অবচয় বা ব্যবহারজনিত ক্ষয়: যখন স্থায়ী মূলধন অর্থাৎ ব্রয়লারের ঘর, যন্ত্রপাতি, গুদামঘর ইত্যাদি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয় তখন এসব মূলধনের ব্যবহারজনিত ক্ষয়কে টাকায় রূপান্তর করা হয়। এই খরচকে অবচয় বলে। যেমন একটি ব্রয়লার ঘর তৈরি করতে যদি ৫০,০০০ টাকা খরচ হয় এবং ঘরটির স্থায়িত্ব ১০ বছর হয় তাহলে প্রতি বছরের জন্য অবচয় হবে শতকরা ১০ ভাগ বা ৫ হাজার টাকা। এই ৫ হাজার টাকা হলো প্রতি বছরের ব্যবহারজনিত ক্ষয় বা অবচয়।

৭. উৎপাদন খরচ: উৎপাদন খরচ বলতে উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, শ্রম, খামারের ভাড়া, অবচয় ইত্যাদি বাবদ খরচকেই বোঝানো হয়।

৮. আয়: কোন পণ্য বা দ্রব্য উৎপাদন করার পর যে বাজার মূল্যে বিক্রয় করা হয় তাই আয়। যেমন উৎপাদিত ব্রয়লার বাজারজাত করে যে অর্থ পাওয়া যায় তাই আয়।

৯. লাভ বা মুনাফা: উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় মূল্য থেকে উৎপাদন বাবদ সকল খরচ বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে, তাই উদ্যোক্তা/ খামারীর লাভ। একে মুনাফাও বলা হয়।

লেখক: চীফ টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার, এসিআই এনিম্যাল হেলথ।

This post has already been read 8175 times!

Check Also

ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পাবনা সংবাদদাতা: ডিমের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা …