রবিবার , নভেম্বর ২৪ ২০২৪

কপোতাক্ষ নদী সংস্কার পূর্বক অতিদ্রুত টিআরএম চালু ও অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নে স্মারকলিপি

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : কপোতাক্ষ এবং শালতা অববাহিকার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার (১৪ মার্চ) সকালে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন কপোতাক্ষ রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পদক মোঃ রেজাউল করিম, তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু, শালতা রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি সরদার ইমান আলি, উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন জোয়ার্দার।

স্মারকলিপিতে কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প ২য় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিজাইন অনুযায়ী নদী খনন, দ্রুত পলি ভরাট হয়ে পুনরায় মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া কপোতাক্ষ নদটি সংস্কার পূর্বক অতিদ্রুত টিআরএম চালু করা, সরকারের “অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা”-র আলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, অতি দ্রুত টিআরএমকে যুক্ত করে পশ্চিম শালতা নদীর ২য় ফেইজ বাস্তবায়ন করার দাবী জানানো হয়।

এ সময় আরও উল্লেখ্য করা হয়, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মধ্য দিয়ে কপোতাক্ষ ও পশ্চিম শালতা নদীটি প্রবাহিত। এ দুটি অববাহিকার সাথে যুক্ত খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা উপজেলার ১০টি এবং সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া ও তালা উপজেলার ১৫টি সহ মোট ২৫টি ইউনিয়ন যার জনসংখ্যা হবে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক। বিগত শতকের ৯০ দশকের শুরুতেই এ এলাকায় জলাবদ্ধতার সূত্রপাত ঘটে। তারপর দুই দশক যাবৎ জলাবদ্ধতার তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ করে। অতিমাত্রায় পলি জমে এলাকার বহু নদ-নদীর মৃত্যু এবং চরম নাব্যতা সংকটের কারণে নিম্ন অববাহিকার বৃহৎ শিবসা নদীও নাব্যতা বা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে কপোতাক্ষ ও পশ্চিম শালতা অববাহিকায় প্রকল্প গ্রহণ করে।

কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের’ কার্যক্রম ২০১৭ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্বারা বিশেষ করে তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়িত হওয়ার কারণে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ২০ লক্ষ অধিবাসী সরাসরি উপকৃত হয়েছে। জনগণের কাছে পূর্বের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও সফলতা রক্ষায় বা টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার আবারও প্রকল্পটির ২য় পর্যায় অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটিতে খরচ হবে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে ৪বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পটিতে কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কল্পে টিআরএমকে যুক্ত করে কপোতাক্ষ নদের উজান অংশে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর হতে মনিরামপুর উপজেলার চাকলা ব্রীজ পর্যন্ত ৭৫ কিমি. এবং নিম্নাংশে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া হতে কয়রা উপজেলার আমাদী পর্যন্ত ৩০ কিমি. নদী খনন, তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন, নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করা, কপোতাক্ষ নদের দুই তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত করা সহ নদের সাথে সংযুক্ত খাল খনন করা কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক পলি ব্যবস্থাপনা, টাইডাল প্রিজম বৃদ্ধি ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর মেয়াদী জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) কার্যক্রম চালানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি প্রায় ১ বছর ৯ মাস পর মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়েছে যা ধীর গতিতে চলমান রয়েছে।

এদিকে পশ্চিম শালতা অববাহিকার প্রকল্পটি গত ২০২১ সালের জুন মাসে ১ম ফেইজ শেষ হয়েছে। ২য় ফেইজ অনুমোদন থাকলেও অর্থ যোগান না থাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাছাড়া উপকূলীয় নদী রক্ষায় টিআরএম প্রযুক্তিকে এ নদী অববাহিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে না। জনগণের ঐকান্তিক দাবীর পাশাপাশি আইডব্লিউএম এর সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও পলি ব্যবস্থাপনা হিসেবে টিআরএমকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যে কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তীব্র জলাবদ্ধতায় এলাকার নীচু বসতি এলাকা প্লাবিত হয়, মৎস্য চাষের ঘের ভেড়ি ভেসে যায়, জীবন-জীবিকায় দেখা দেয় মারাত্মক সংকট। অন্যদিকে নদী থেকে মৎস্য ঘেরের মধ্যে এখন আর প্রয়োজনীয় জোয়ারের পানি উঠানো যাচ্ছে না। ফলে মাছ ও ধান উভয় চাষাবাদ অব্যাহত রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে একরকম অচলাবস্থা। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বাস্তভিটা ত্যাগ করে বসবাসের জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

স্থানীয়  জনগণের পক্ষ থেকে কপোতাক্ষ ও পশ্চিম শালতা অববাহিকার অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা যাতে অব্যাহত থাকে এবং অববাহিকা যাতে আবারও জলাবদ্ধ কবলিত না হয় সেজন্য অনুমোদিত প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানানো হয় স্মারকলিপিতে ।

This post has already been read 3100 times!

Check Also

কপ২৯-এ জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং প্রাক-২০৩০ উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জনের আহ্বান জানালো বাংলাদেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান …