নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করি, আগামী দিনে দেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের শ্রেষ্ঠ সংগঠন হবে (BAFIITA) বাফিটা। কারণ, সরকারের কাছে আমরা যা চেয়েছি, তারা সেটি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেন। আমরা ব্যবসার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি এবং নিরাপদ প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবো।
বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড এসোসিয়েশন (বাফিটা) এর ৫ম বার্ষিক সাধারণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তাগণ এসব কথা বলেন। শনিবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের স্যামসান এইচ চৌধুরী সেন্টারে উক্ত বার্ষিক সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সভার শুরুতে বাফিটা’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এ.এম আমিরুল ইসলাম সঞ্চালনায় সভায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বাফিটা’র সভাপতি সুধীর চৌধুরী বলেন, প্রাণিজ খাদ্য তৈরির কাঁচামাল বা উপকরণের গুণগত মান রক্ষা করা আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। ভালো খাদ্য উপকরণ ভালো ফিড তৈরিতে সাহায্য করে, আর ভালো ফিড ভালো প্রাণি উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ভালো উপকরণ নিয়ে ব্যবসা করা।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি ও বর্তমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও অনেক লড়াই করে আমরা টিকে আছি এবং প্রতিনিয়ত আমাদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে আমরা আশা করতে পারি, ভবিষ্যতে হয়তো সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং আমাদের ব্যবসা আরো ভালো হবে।
সুধীর চৌধুরী বলেন, দেশের প্রাণিজ খাদ্য উপকরণ উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও সরবরাহকারী হিসেবে বাফিটা’র সদস্যদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং সময়ে সময়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেস্টা, দক্ষতা ও সাচিবিক তত্ত্বাবধানে এবং সকল সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এসোসিয়েশন -এর অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
বাফিটা’র সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন খান বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের চেয়ে দায়িত্ব পালন করাটাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়। আমাদের সুযোগ আছে এই সেক্টরের জন্য কিছু করা; আমরা সেক্টরের জন্য কিছু করতে চাই এবং করছি। মৎস্য ও প্রাণিজ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম সম্পর্কে গিয়াস উদ্দিন খান বলেন, তিনি একজন ডাইনামিক ও প্রচারবিমুখ মানুষ এবং আমাকে একাধিকবার বলেছেন সেক্টরের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার সে বিষয়ে আন্তরিকভাবে আমাদের সহযোগিতা করবেন।
তিনি বলেন, কোন সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে তাদের কাছে যেতে হবে; শুধুমাত্র ফেসবুক ও পেপার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই সমস্যার সমাধান হবে না, সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে প্রত্যেকটা জায়গায় যেতে হবে। আমরা যদি সংশ্লিষ্ট জায়গুলোতে যাই, তবে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানে বেগ পেতে হবে না।
সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংগঠনকে নিয়ে যারা ভাবতে পারে, সময় দিতে পারে তাদের আরো বেশি করে সংগঠনের কার্যকরী পরিষদে স্থান করে দেয়া উচিত। এতে করে সংগঠনের গতি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বাফিটা আগামী দিনে প্রাণিসম্পদ সেক্টরের শ্রেষ্ঠ সংগঠন হবে।
বাফিটা’র উপদেষ্টা জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাফিটার পক্ষ থেকে যা বলে এনবিআর থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত তা সাদরে গ্রহণ করে এবং এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। কারণ, আমাদের সাথে বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সকল সদস্যের সম্মিলিত সহযোগিতা পেলে বাফিটা অন্যান্য সংগনের চেয়ে আরো অনেক বেশি এগিয়ে যাবে।
সভায় বিগত দিনে মৃত্যুবরণকারী সদস্যদের জন্য শোক প্রস্তাব আনা হয় এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিগত ২০২১ সনের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুবুল আলম। ২০২০-২১ অর্থ বছরের আয়-ব্যায়ের হিসেব, অডিট রিপোর্ট এবং ২০২১-২২ সনের বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ মো. ফারুক এবং সেটি উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। এছাড়াও নতুন সদস্যদের পরিচিতি, ফুল দিয়ে বরন এবং সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্যগণের জন্য উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আলাল আহমেদ, উপদেষ্টা জহির আহমেদ, সহ-সভাপতি সৈয়দুল হক খান, সদস্য মো. আলতাফ হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, , বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড এসোসিয়েশন (বাফিটা) প্রাণিজ (পোলট্রি, ডেইরি ও মৎস্য) খাদ্য উপকরণ উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পেশাজীবিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অলাভজনক ও সেবামূলক সংগঠন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি তথা সকল শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে কার্যনির্বাহী কমিটির সমন্বয়ে ব্যবসায়ের বিভিন্ন বিষয় বা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে এবং সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে সংগঠনটি লিখিতভাবে সুপারিশ করে আসছে। বাফিটা ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত, যা বাংলাদেশের প্রাণিজ খাতের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সাধনে বিগত ৭ বছর ধরে অবিরাম কাজ করে চলেছে এবং বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৬৯ জন।