এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক : বিদেশ থেকে মহিষের হিমায়িত মাংসের আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ চায় দেশের প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আহ্কাব)। সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বার্থে বিদেশ থেকে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানির প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানিয়েছে। রোববার (৩১ জুলাই) আহকাব সভাপতি ডা. এম নজরুল ইসলাম ও মহাসচিব মোহাম্মদ আফতাব আলম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপির মাধ্যমে উক্ত দাবী করেছেন।
প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, দেশের মৌলিক কৃষিজ খাতের পণ্য সামগ্রীর আমদানি নির্ভরতা আমাদের সামগ্রীক অর্থনীতি ও ভোক্তাদের প্রয়োজনের মুহুর্তে চরম বিপদে ফেলে। নিজ দেশের খাদ্যনিরাপত্তার অজুহাতে রপ্তানিকারক দেশ সমূহ কখনোই আমাদের জনগণের পাশে দাড়ায় না।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প একটি বিকাশমান শিল্প। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজঅব্দি এ শিল্প যতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র বিদেশী গরুর অবাধ বাণিজ্যের কারণে। ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প বাংলাদেশের একটি মৌলিক শিল্প। মৌলিক শিল্পে বিদেশী আমদানি নির্ভরতা গ্রহণযোগ্য নয়। এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে গ্রাম-বাংলার কোটি কোটি পরিবার ও খামারীর জীবন-জীবিকা।
বিগত কয়েক বছরে বিদেশ থেকে অবাধ গরু চোরাচালান বন্ধের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়তার নিরীখে এ দেশে ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিকশিত হতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক ও নারীরা গরু মোটা-তাজাকরণ এবং দুগ্ধ শিল্পে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছে। সরকারও স্বল্প সুদে ডেইরি ও ক্যাটল শিল্পের জন্য ঋণ প্রদান করছে। যার ফলশ্রুতিতে অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিগত কয়েক বছরের কোরবানের সময়েও দেশীয় গবাদি-পশুর মাধ্যমে সম্পূর্ণ যোগান দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখানে তরুণ দেশীয় উদ্যোক্তারা দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান অবস্থা বহাল থাকলে আশা করা যাচ্ছে খুব শিঘ্রই এ শিল্প আরো বিকশিত হবে এবং আমরা গরু/মহিষের মাংস বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো। একই সাথে এদেশের অন্যান্য কৃষিজ খাতও যুগপৎভাবে এগিয়ে যাবে।
প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, বিদেশ থেকে অবাধে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি করলে দেশীয় উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক খামারীরা চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। এর ফলে বিশাল যুব সমাজ তথা উদ্যোক্তারা বেকার হয়ে পড়বে যার প্রভাব ব্যাপকভাবে গ্রামীন অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে পড়বে। এছাড়া মহিষের মাংসের আমদানির আড়ালে অবাধে গরুর মাংস আমদানীর সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সেখানো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ১৬.৫০ কোটি ভোক্তার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পুরণে স্বাবলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে এদেশের আপামর খামারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা হিসাবে বার্ষিক মাংসের চাহিদা ৭৫.২০ লাখ মে. টন। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী থেকে মোট মাংস উৎপাদিত হয়ছে ৯২.৬৫ লাখ মে. টন। অর্থাৎ ১৭.৪৫ লাখ মে. টন উদ্বৃত্ত। সরকারী তথ্যমতে আমরা ইতোমধ্যে প্রাণিজ আমিষে স্বাবলম্বিতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিদেশ থেকে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বর্তমানে সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ তথা এদেশের বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে আমরা হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানির প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানাচ্ছি।