নিজস্ব প্রতিবেদক: যে কোন প্রাণির স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ার জন্য ফাইবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই পোলট্রিও এর বাইরে নয়। অন্যদিকে মুরগির বিষ্ঠার মান থেকে শুরু করে ফেদার পেকিং, ক্যানিবেলিজম, এফসিআর, টক্সিন প্রত্যেকটি বিষয় টেকসই পোলট্রি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতের স্বনামধন্য কোম্পানি প্লানেট ফার্মা লিমিটেড জার্মানী থেকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রমধর্মী একটি পণ্য এনেছে যা দেশের ফিডমিলার ও ব্রিডার ফার্মগুলোতে ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে, বলে জানা যায়।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর অভিজাত হোটেল রেডিসান ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে INSOLUBLE FIBRE – AN “ESSENTIAL NUTRIENT” IN POULTRY NUTRITION” শীর্ষক সেমিনারে ARBOCEL® নামক উক্ত পণ্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। পণ্যটির স্থানীয় এজেন্ট (বাংলাদেশ) প্লানেট ফার্মা লিমিটেড ও জার্মানভিত্তিক বিশ্বখ্যাত কোম্পানি জেআরএস যৌথভাবে উক্ত সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মানী থেকে আগত জেআরএস কোম্পানির হেড অব বিজনেস (লাইভস্টক ইউনিট) ডা. ম্যানফ্রেড পায়েচ (Dr. Manfred Pietsch, Head of Business Unit Livestock, JRS, Germany)। এছাড়াও জেআরএস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোহিত রাউত উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেশের পোলট্রি সেক্টরের উদ্যোক্তা, পুষ্টিবিদ, বিজ্ঞানী ছাড়াও স্থানীয় (বাংলাদেশ) পরিবেশক প্লানেট ফার্মা লিমিটেড -এর পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন ও বদরুল হাসান খান সহ প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্লানেট ফার্মার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ রিয়াজ গৌরি। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সেমিনারে আগত স্পিকারদের পরিচয় তুলে ধরেন। এছাড়াও ১৫ আগস্টে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি জানান, মার্চ ২০২০ থেকে ARBOCEL® বাংলাদেশে বাজারজাত শুরু করলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়নি।
এরপর জেআরএস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোহিত রাউত (Mr. Rohit Raut, Managing Director, JRS India Pvt. Ltd.) কোম্পানিটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান ১৪০ বছরের পুরাতন কোম্পানি JRS Germany এর সারাবিশ্বে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা এবং ৯০টি প্রোডাকশন প্লান্ট রয়েছে।
মি. রোহিত বলেন, জেআরএস মূলত প্লান্ট নির্ভর কোম্পানী, আমরা সবসময় ন্যাচারাল উৎস থেকে পণ্য উৎপাদন করে থাকি। অর্গানিক কাঁচামালের মাধ্যমে এর পণ্যসমূহ উৎপাদন করা হয়, জানান রোহিত।
মূল আলোচনায় Dr. Manfred Pietsch বলেন, খামারে থাকা ভেজা লিটার সাধারণত মুরগির বুকের দিকে ফোসকা, অপরিচ্ছন্ন ডিম, নেক্রোটিক এন্টারাইটিস সহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী। সেজন্য লিটারকে যতটা সম্ভব শুষ্ক রাখাটা জরুরি। ARBOCEL® এমন একটি পণ্য যা মুরগির লিটারের মানকে উন্নত করে শুষ্ক রাখে। ফলে উল্লেখিত সমস্যাগুলো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
তিনি বলেন, আর্দ্রতার পরিপ্রেক্ষিতে লিটারের গুণমান উন্নত করা মানে সেই প্যারামিটারের পাশাপাশি পোলট্রির সাধারণ স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নত হবে। ARBOCEL® লিটারের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Dr. Manfred Pietsch আরো বলেন, লেয়ার ফার্মিংয়ের আরো একটি সমস্যা হলো মুরগির একে অপরের পালক খোঁচাখুঁচি করা যেটিকে ইংরেজীতে Feather Pecking বলে। এর ফলে প্রায়শই মুরগি স্বজাতির ভক্ষণ বা ক্যানিবেলিজম (Cannibalism) প্রবণতা বেড়ে যায় এবং মুরগির মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। ‘অনেকেই মনে করেন, এটি মুরগির একটি সাইকোলজিক্যাল সমস্যা। কিন্তু এটি কোন সাইকোলজিক্যাল নয় বরং নিউট্রিশনাল সমস্যা। মুরগির এমন স্বভাবের জন্য খাদ্যে প্রোটিন, সোডিয়াম ও কিছু অ্যামাইনো এসিডের অভাব দায়ী। ARBOCEL® এসব ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যা মুরগির উল্লেখিত বদভ্যাস হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ARBOCEL® লেয়ার মুরগির পুলেট পর্যায়ে পর্যাপ্ত ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিমপাড়া শুরু করতে পারে’ -যোগ করেন ডা. ম্যানফ্রেড।
Dr. Manfred Pietsch এর প্রেজেন্টেশন শেষে আগত অতিথিদের জন্য আলোচ্য বিষয়ের উপর উন্মুক্ত প্রশ্নের আহ্বান করা হয় এবং প্রতিটি প্রশ্নের সাবলীল উত্তর দেন JRS থেকে আগত বিশেষজ্ঞগণ। এরপর মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে ARBOCEL® এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
ARBOCEL® এর স্থানীয় (বাংলাদেশ) বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্লানেট ফার্মা লিমিটেড -এর পরিচালক শাহ ফাহাদ হাবীব এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, ARBOCEL® হচ্ছে এক ধরনের সলিউবল ফাইবার। এটি মূলত ব্রিডার ও লেয়ার ফিডের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়। ব্রয়লার ফিডের জন্যও এর উপকারিতা আছে।
তিনি বলেন, আমাদের ব্রিডার ফার্মগুলোর একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে ডার্টি এগ বা অপরিচ্ছন্ন ডিম; এসব ডিম হ্যাচারিতে ইনকিউবিটর মেশিনে সেট করা যায় না। ARBOCEL® যদি ব্রিডার ফিডে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ডার্টি এগ এর সংখ্যা, ফেদার পিকিং (Feather Pecking) এবং ক্যানাবিলিজম (Cannibalism) কমে আসবে। যে কারণে, সার্বিকভাবে ডিমের উৎপাদন বেড়ে যাবে। ARBOCEL® লিটারে (মুরগির বিষ্ঠা) থাকা আদ্রর্তা ১০-১৫% কমিয়ে সেটির মান উন্নত করে, যে কারণে লিটার শুষ্ক থাকে; ফলে সার্বিকভাবে লেয়ার ফ্লক ভালো থাকে।
শাহ ফাহাদ হাবীব আরো বলেন, ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ARBOCEL® এনজাইমের কার্যকরিতা বাড়িয়ে দেয় যার জন্য এফসিআর কমাতে সহায়তা করে। মুরগির স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ার জন্য ফাইবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের দেশে সাধারণত পোলট্রিতে ফাইবার হিসেবে রাইস কিংবা হুইট ব্রান ব্যবহার করা হয় যেগুলোতে টকসিন থাকার সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু ARBOCEL® সম্পূর্ণভাবে টক্সিন মুক্ত।
দেশের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ফিডমিলার ও ব্রিডার ফার্মে ARBOCEL® ব্যবহার হচ্ছে এবং তাঁদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। কারণ আমরা প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পণ্যটি দেশের বাজারে বাজারজাত করছি। কিন্তু করোনা মহামারির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে এতদিন উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়নি। আশা করি, আজকের এই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দেশের অন্যান্য ফিডমিলার ও ব্রিডার ফার্ম সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগণ ARBOCEL® সম্পর্কে আরো বেশি জানবেন ও ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন’ -যোগ করেন শাহ ফাহাদ হাবীব।
সমাপনী বক্তব্যে প্লানেট ফার্মা লি: -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ হাবিবুল হক বলেন, চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে একটি অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম অত্যাধিক বেড়ে গেছে, সেই সাথে বেড়েছে ডলারের দাম। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ একদিকে যেমন বেড়ে গেছে, অন্যদিকে ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম না পাওয়াতে পোলট্রি সেক্টর চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ডিম ও মুরগি সম্পর্কে নেচিবাচক প্রচারনা; সবকিছু মিলেয়ে দেশের পোলট্রি শিল্প বিরাট এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
অনুষ্ঠানে অন্যতম আকর্ষণ ছিল র্যাফেল ড্র যেখানে প্রথম পুরস্কার হিসেবে আই ফোন প্রো-ম্যাক্স ১৩ জিতে নেন চট্টগ্রামের প্রগ্রেসিভ হ্যাচারির ইমরান উদ্দিন সাগর।