বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটে ভেসে গেছে ঘের-পুকুরের মাছ, দুর্ভোগ চরমে

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের প্রভাবে গেল তিন দিন নিরবিচ্ছন্ন বৃষ্টি হচ্ছে বাগেরহাটে। সেই সাথে পূর্নিমার জোয়ারে স্বাভাবিকের থেকে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ার ও বৃষ্টির পাতিনে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার অন্তত আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কয়েশক মৎস্য ঘের ও পুকুরের মাছ। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। রান্নাও বন্ধ রয়েছে কিছু কিছু পরিবারে। ঘেরে পার ও ক্ষেতে থাকা কিছু সবজির ক্ষতি হলে, বৃষ্টিতে আমন ধানের উপকার হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকার পিচের রাস্তা উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে দেখা যায়। ভৈরব নদীর পানিতে মাঝিডাঙ্গা, পোলঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির রাস্তা ধ্বসে গেছে। এসব এলাকার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে পানিতে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারুইখালি, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, নিশানবাড়িয়া জিউধরা, খাউলিয়া, চিংড়াখালি, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের অন্তত দেড় হাজার পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে। শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন।

এছাড়া মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদীতীরবর্তি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এদিকে, তৃতীয় দিনের মতো জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা ও করমজল বন্য প্রানি প্রজনন কেন্দ্র প্লাবিত হয়েচে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদনদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। স¤প্রতি সময়ে নদীতে যেহারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণিকুল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শুকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রাণিকুল রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন,গেল দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মৌসুমি সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দ্রæত এই পানি নেমে না গেলে সবজি চাষিদের বেশ ক্ষতি হবে। তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। জেলায় ইতিমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান রোপন শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ –শরনখোলা) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ ও শরনখোলা উপজেলার অন্তত দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্ধী রয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। পানিবন্ধি মানুষদের সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বেশকিছু এলাকায় মৎস্য ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ার খবর রয়েছে। উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের নির্দেষ দেওয়া হয়েছে। নিরুপন শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বেশিকিছু এলাকা উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে নদীর   তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে। জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মানের জন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার বড় একটা অংশ নদীর পানি থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীর  তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মান কাজ খুব শিগ্রই শুরু করা হবে বলে জানান এই  নির্বাহী প্রকৌশলী ।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জেলার বেশকিছু পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে।

This post has already been read 2524 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …