বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

খুলনায় খাদ্য উপ নিয়ন্ত্রক শারীরিক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে কর্মকর্তাদের অনশন ও মানববন্ধন

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগ টেন্ডার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় খুলনায় খাদ্য উপ নিয়ন্ত্রক সেখ আনোয়ারুল করিম শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) খাদ্য কর্মকর্তারা অনশন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। খুলনার খাদ্য কর্মকর্তা সমিতি ও খাদ্য পরিদর্শক সমিতি যৌথভাবে এ কর্মসূচি আহবান করে।

খুলনা চলাচল ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (খাদ্য) উপ নিয়ন্ত্রক সেখ আনোয়ারুল করিম বলেন, খাদ্য ঠিকাদার সমিতির ১৫-১৭ জন ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা পৌনে ১২ টার দিকে তার দফতরে আসেন। তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলেন। এক পর্যায়ে জেলা কার্যালয়ের টেন্ডার বিষয়ে আলোচনা করতে শুরু করেন। তাদেরকে এ বিষয়ে থামিয়ে দিয়ে বলা হয়ে, জেলা অফিসের আলোচনা এখানে করা ঠিক না। তখন তারা চলে যান। ৫ মিনিট পর তারা ফিরে এসে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে শার্ট টেনে ছিড়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত জখম করে। এরপর সহকর্মীরা তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি হাসপাতাল থেকে এসে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঠিকাদার সমিতির সেক্রেটারিসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ ও ১০-১২ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

খুলনা খাদ্য ঠিকাদার সমিতির সেক্রেটারি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ওই কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করতে না পারায় ঠিকাদাররা তার কাছে যেয়ে কারণ জানতে চায়। তখন সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে ঠিকাদারদের সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়। কোন শারীরিক আঘাতের ঘটনা ঘটেনি।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: জাহাঙ্গীর বলেন, খাদ্য উপ নিয়ন্ত্রক সেখ আনোয়ারুল করিমকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২৭ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ ও ১০-১২ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে খাদ্য উপ নিয়ন্ত্রককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে অনশন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কর্মকর্তারা। কার্যালয় চত্তরে আয়োজিত অনশন কর্মসূচি চলাকালে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা সিএসডির ব্যবস্থাপক মঈনুল ইসলাম। বত্তৃতা করেন বটিয়াঘাটা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: জাকির হোসেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন, মহেশ্বরপাশার সহকারী ব্যবস্থাপক মঞ্জুর রহমান, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের সহকারী উপ পরিচালক আব্দুস সোবহান সর্দার, রূপসা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজিত মুখার্জি, বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির খুলনা বিভাগের সহ সভাপতি মনিরুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুজ্জজামান সোহাগ, প্রচার সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, নির্বাহী পরিষদ সদস্য রবিউল ইসলাম, খাদ্য পরিদর্শক নাজমুল হোসেন, স্বর্ণালি বিশ্বাস, হিসাব রক্ষক (চলাচল) নিশিত চন্দ্র দাশ প্রমুখ। পরে কর্মকর্তারা কার্যালয়ের সামনে খুলনা যশোর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

ঠিকাদাররা খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর টেন্ডারে অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগে জানান, জেলায় ৮টি এলএসডি ও দু’টি সিএসডি খাদ্য গুদাম রয়েছে। খাদ্য বিভাগ থেকে গত ২৫ জুলাই ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। দরপত্র জমাদানের শেষদিন ছিল গত ২২ আগস্ট। ওইদিন দরপত্র খোলা হয়। দরপত্র জমা পড়ে দুইশ’র বেশি। এই প্রক্রিয়া পাবলিক প্রক্রিউরমেন্ট এ্যাক্ট ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী আহবান করা হলেও বাস্তবে সেই নীতি অনুসরণ করা হয়নি। বিধি মোতাবেক দরপত্রটি গ্রহণের তারিখ সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির কারণে আরও তিনদিন পর ২৫ অক্টোবর দরপত্র গ্রহণের তারিখ নির্ধারণসহ সংযুক্ত বিধি মোতাবেক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান ছিল। সংশোধিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এ্যাক্ট ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮এর বিধি ৯০ এর (ছ) (ঝ) ও ৯৪ এর (৯) এর (খ) এবং ৯৫ এর (২) (৩) (৬) অনুসরণ করা হয়নি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সিডিউলে উল্লেখ রয়েছে, হালনাগাদ আয়কর সনদ ২০২০-২১ অর্থ বছরের আয়কর সনদ দাখিল দিতে হবে। ২০২১-২২ এর সনদ দাখিল না করাকে দরপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে বলছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। জেলা দপ্তর থেকে দরপত্র সংক্রান্ত যে সংশোধনী জারি হয়েছে সেখানে এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ নেই।

অন্যদিকে ব্যাংক থেকে আর্থিক স্বচ্ছলতার সনদের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞাপনে ত্রুটি আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয়-আর্থিক দরপত্র বা চুড়ান্ত ঠিকাদারী অত্যন্ত গোপনীয় বিষয় হওয়া সত্ত্বেও দরপত্রে কোন কোন ঠিকাদার কোন কোন এলএসডি ও সিএসডি’র শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে তা সকলেই জানে। এর মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন এবং পিপিআর’র শর্ত মেনে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দরপত্র যাচাই-বাছাই করেছেন। মূল্যায়ন কমিটি বাছাই সাপেক্ষে যারা যোগ্য হয়েছে তাদের নির্বাচন করেছে। একই সাথে সেটি পাস করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনেকেই বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। তবে পিপিআর বিধান অনুযায়ী কেউ যদি অযোগ্য হয় সেই কারণ জানাতে কমিটি বাধ্য নয়। এরপরও কারও আপত্তি থাকলে সেটা আরসি ফুডের কাছে তারা আবেদন করতে পারেন

This post has already been read 2580 times!

Check Also

ময়মনসিংহে তারুণ্যের সভায় মাদকমুক্ত জীবনের শপথ

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা: উন্নত সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অবদান রাখতে মাদকমুক্ত জীবনের শপথ নিয়েছে ময়মনসিংহের …