শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন কোনভাবেই ব্যাহত করা যাবে না -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান বৈশ্বিক সংকটেও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন কোনভাবেই ব্যাহত করা যাবে না এবং উৎপাদন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

বুধবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্পের আওতায় প্রডিউসার গ্রুপ সক্রিয়করণ ও প্রাণিসম্পদ কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনা বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, করোনার ভয়াবহ সংকট এবং তার পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা যেন বাংলাদেশের অদম্য সাহসী অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে। বৈশ্বিক সংকটে প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন কোনভাবেই ব্যাহত করা যাবে না। উৎপাদনে কোথাও যাতে গাফিলতি না হয় সেটা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের সব ধরণের যোগান থাকা সত্ত্বেও যাতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয় সেটা মনে রাখতে হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ধরে রেখে এ খাতকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি গুণগত মানেও এ খাতকে উন্নত করতে হবে। এ খাতের টেকসই উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় খাত প্রাণিসম্পদ। এ খাত থেকে দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদনের সাথে এলডিডিপি প্রকল্প সম্পৃক্ত। দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদনে সমৃদ্ধ হতে না পারলে, খাবারের বড় একটি অংশের সংকট হতে পারতো। আমিষের সংকটে আমরা বিপন্ন হয়ে পড়তাম। প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক মানুষদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ছে। তারা উদ্যোক্তা হয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নারী, বিধবা, দরিদ্র, অসহায়, বেকার সবাই মিলে সংযুক্ত হয়ে এলডিডিপি প্রকল্পের প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ফলে আর্থিকভাবে গ্রামীণ জীবনের আমূল পরিবর্তন আসছে।

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাণিসম্পদ খাতে বড় সাফল্য এসেছে। তারাই প্রাণিসম্পদ খাতে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রকল্পের অর্থ যেন অপব্যবহার না হয় সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রাণিসম্পদ খাতকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ খাতে সম্পৃক্তদের সার্বক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, আজ বাংলাদেশ মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি। এ অর্জন করতে না পারলে কোরবানির সময় ভারত-মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু না আসা পর্যন্ত কোরবানির চাহিদা পূরণ করা যেত না। আজ আমরা প্রাণিসম্পদ খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন বিশ্বকে দেখাতে পারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে সব সময় উৎসাহিত করেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ থেকে মাংসের চাহিদা আমাদের দেশে আসছে। এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জীবাণুমুক্ত মাংস সরবরাহের জন্য রোগমুক্ত প্রাণিসম্পদ অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের মান নিয়ন্ত্রণ পরিক্ষাগার তৈরি করা হয়েছে। যাতে মাংস রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন রকম ক্ষতিকর অবস্থার মুখোমুখি আমরা না হই।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এগ্রিকালচার ইকনোমিস্ট ও এলডিডিপি প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার আমাদো বা। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এলডিডিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। এলডিডিপি প্রকল্প নিয়ে উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান কারিগরি সমন্বয়ক ড. মো. গোলাম রব্বানী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বলেন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প প্রাণিসম্পদ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধন করবে। এ খাতের ইতিবাচক রূপান্তরের জন্যই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য দেশের ৬১ জেলার ৪৬৬ উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

This post has already been read 2083 times!

Check Also

মহিষের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

সাভার সংবাদদাতা: মহিষের উৎপাদন বাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, একসময় …