নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা যেহেতু অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অভ্যস্ত; তাই সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতেও আমাদের সমস্যা হবে না। আমাদের সততা, ভালোবাসার শক্তি দিয়ে আশু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করবো ইনশাল্লাহ। কারণ, ফিসটেক পণ্যের মান নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে কোন প্রশ্ন নেই, এটি আমাদেরকে আরো বেশি দায়িত্বশীল, উৎসাহিত ও সাহসী করে তোলে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) মৎস্য সেক্টরের স্বনামধন্য কোম্পানি ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর ‘১৭তম বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২২’ এ এসব কথা বলেন ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউল করিম ভূঁইয়া। সকাল ৯টায় ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর মো. জিয়াউর রহমান (সিনিওর টিএসও), মিল্লাত হোসেন (সিনিওর টিএসও) ও একেএম অমিত হাসান কর্তৃক পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত এবং সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার (গ্রোটেক এনিমেল হেলথ) কর্তৃক পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।রাজধানীর উত্তরাস্থ জমজম কনভেনশন সেন্টারে ক্লাবে সাধারণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আতাউল করিম ভূঁইয়া বলেন, ২০২২ সনটি আমাদের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জিং বছর ছিল। কিন্তু আমাদের সহকর্মীদের পরিশ্রম, ত্যাগ, প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার কারণে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি। কোম্পানির প্রতি কর্মীদের প্রচন্ড রকমের ভালোবাসার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে, ভালোবাসা থাকলে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। প্রায় সারাবছরই আমাদের পণ্যের স্বল্পতা ছিল, আমরা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারিনি; এছাড়াও নানা ধরনের প্রতিকূলতা ছিল। কিন্তু আমাদের মাঠ পর্যায়ের যোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছি। আর এসবই সম্ভব হয়েছে সকলের ভালোবাসার শক্তির কারণে, এই ভালোবাসা আমাদেরকে আরো বেশি সাহসী করে তুলেছে।
‘গেল দু’বছর কোভিড পরিস্থিতিতে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল; সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং বছরের শেষ পর্যায়ে এসে আরো বড় ক্রাইসিস, সমগ্র বাংলাদেশই একটা বড় ধরনের ক্রাইসিসেরে মধ্যে যাচ্ছে, এলসি খুলতে বিলম্ব হচ্ছে কিংবা ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। ডলারের দাম ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করাতে সবকিছুতেই আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু প্রোডাক্টের দাম আমরা সেভাবে বাড়াতে পারিনি। ফলে বিনিয়োগের তুলনায় লাভ অনেক কমে গেছে। তাই চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যায়নি, আগামী ২০২৩ সন আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে’- যোগ করেন মি. ভূঁইয়া। এছাড়াও তিনি ২০২৩ সনের সেলস বাজেট উপস্থাপন করেন এবং ২০২২ সনে নিয়োগকৃত নবাগত কর্মকর্তাদের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে দিক নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ তারেক সরকার। তিনি বলেন গত দুই বছর আমরা নানা কারণে ভালো করতে পারিনি; কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার পরেও ২০২২ সনের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছি। আমি এটিকে ধরে রাখতে এবং সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি এগিয়ে যেতে চাইলে আমাদের প্রত্যেকের ভেতর এক ধরনের ওউনারশিপ অর্জন করতে হবে। ‘কোম্পানি মানেই আমরা, আমরা মানেই কোম্পানি’ এই ওউনারশিপ সকলের মধ্যে থাকতে হবে। যদি এই ওউনারশিপটি আমাদের মধ্যে থাকে তবে ২০২৩ সনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমাদের জন্য সমস্যা হবে না।
আমাদের প্রত্যেককে আশাবাদী হতে হবে, আশা ছাড়া যাবে না। তবে শুধু আশা করলেই হবে না, আশার সাথে কাজও করতে হবে, তবেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে। আমরা মনে করি, নানা সমস্যার মধ্যেও আমরা ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন গ্রোটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান খোন্দকার ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন প্রতিবছর এই দিনটি (বার্ষিক সাধারণ সভা) শেষ হওয়ার পর আবার অপেক্ষায় থাকি কবে এই দিনটি আসবে। সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে নানান ধরনের দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে আমাদের এই আয়োজন নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। শুধু আমাদের দেশ নেয়, সারা পৃথিবীতেই এক ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। আমাদের মতো আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে সেই সমস্যাটি আরো বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমাদের এলসি খুলতে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সনে আমাদের আরো বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করারর জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে আরো বেশি বেগবান করতে হবে। আমাদের কর্মী বাহিনীর পরিশ্রম, চেষ্টা, সততা ও আন্তরিকতার প্রতি বিশ্বাস, আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর জেনারেল ম্যানেজার রাফিউল হাসান চৌধুরী কোম্পানির বিগত ২০২২ সনের বার্ষিক প্রতিবেদন ও আগামী দিনের সেলস পলিসি উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত বিপণন কর্মকর্তাদের বিপণন বিষয়ে উৎসাহের মাধ্যমে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এছাড়াও তিনি গত বছরের কর্মকর্তারা কে কোন কর্মকান্ডে জড়িত এবং তাদের সাফল্য উপস্থাপন করে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করেন।
অনুষ্ঠানে গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিবেদন তুলে ধরেন ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড-এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার, ব্যবস্থাপক মো. সোহেল মিয়া এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. আরিফুল ইসলাম। এ সময় তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষকৃত মাছের পুকুরের ডেমো ফলাফল প্রদর্শন করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন গবেষণাধর্মী সাফল্য ও করণীয় উল্লেখ করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে গ্রুপ ডিসকাশন করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় নতুন বছরের ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন, ইনসেনটিভ ছাড়াও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী রাখা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের মাঝে বার্ষিক নগদ প্রণোদনা ও শীতের প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করা হয় আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায়। এ পর্বটি পরিচালনা করেন ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউল করিম ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের আরো বক্তব্য রাখেন গ্রোটেক গ্রুপ চেয়ারম্যানের স্ত্রী সৈয়দা মালেকা পারভীন, গ্রোটেক এনিমেল হেলথ-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান, গ্রোটেক এগ্রো’র অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার এস.এম. আবু সায়েম প্রমুখ।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন কোম্পানীর এইচআর বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার নরোত্তম চক্রবর্তী।
উল্লেখ্য, ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড (গ্রোটেক গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) বাংলাদেশ মৎস্য সেক্টরে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং পাবদা ও গোলসা মাছের ফিড দেশে তারাই প্রথম বাজারজাত করে। তাদের রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দীপপুঞ্জ থেকে নিয়ে আসা এসপিআর (স্পেসেফিক প্যাথোজেন রেজিস্ট্যান্স) তেলাপিয়া পোনার হ্যাচারি, মাছ ও চিংড়ির পুকুরের সমস্যা নিয়ে নিঁখুত গবেষণা ও পর্যালোচনার জন্য খুলনায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম আরটি-পিসিআর (রিয়াল-টাইমপলিমারেজ চেইনরিয়েকশান) ভিত্তিক মলিকু্লার ল্যাবরেটরী। এছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠান মৎস্য অধিদপ্তরের পরে বেসরকারি একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিশারিজ গ্রাজুয়েট কাজ করেন প্রতিষ্ঠানটিতে।