শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

তেলাপিয়া মানুষের মাছের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে –মৎস্য ডিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: তেলাপিয়া সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় প্রোটিন সোর্স। তেলাপিয়া দেশের অন্যতম একটি মাছ, যা বাজারের বড় একটি অংশ দখল করে আছে। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে দেশে মাছের যে একটি সংকট ছিল, সেই সংকট কাটাতে এবং দেশের মানুষের মাছের চাহিদা পূরণে তেলাপিয়া মাছ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমজীবী একজন মানুষেরও মাছ ক্রয় করার মতো সামর্থ্য আছে। এই মাছের যোগানের পেছনে ফিসটেক এর মতো কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। দেশের সমস্ত কৃষি সেক্টর থেকে সরকারের যে যে আয় হয় তার ২৩ শতাংশ মাছ থেকে আসে।

ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড আয়োজিত ‘Tilapia Revolution in Bangladesh : A grand Farmers meet’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক । শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর উত্তরাস্থ হোয়াইট প্যালেস কনভেনশন হলে উক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

মৎস্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক বলেন, মাছের দাম বর্তমানে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আছে এবং কেউ যদি বলে মাছ বিক্রি করে লাভ হয় না, তবে সেটি সঠিক নয়। মাছ চাষ বর্তমানে একটি সম্মানজনক পেশা। যে লোকটি মাছ চাষ করে সে এখন গর্ব করে বলে, আমি মাছ চাষি। মাছ চাষে বিপ্লবের পেছনে দেশের মিডিয়াগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।

মাহবুবুল হক বলেন, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে আমরা চতুর্থ স্থানে আছি। কিন্তু বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে কম্প্লায়েন্স। দেশের বাইরে তেলাপিয়ার মাছের অনেক বড় একটি বাজার আছে। কিন্তু সেজন্য আমাদের কম্প্লায়েন্স মানতে হবে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মাছ তৈরি করতে হবে। টেকনোলজি যদি আমরা গ্রহণ না করি এবং বিদেশে রপ্তানিযোগ্য তেলাপিয়া তৈরি করতে না পারি; তবে মাছ উৎপাদনের যে গ্রোথ রয়েছে, তাতে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা ঝুঁকিতে পড়ে যাবো। আমরা এই কম্প্লায়েন্স এর ব্যাপারে এখন অধিক মনোযোগ দিচ্ছি এবং আমরা অলআউট এগুচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, দেশে ২৫ লাখ মৎস্য খামারের মধ্যে আমরা ইতিমধ্যে ৫ লাখ খামারকে নিবন্ধের আওতায় আনতে পেরেছি। ২০৪১ সনের মধ্যে আমরা ৮৫ লাখ মে. টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ২০২৫ সনের মধ্যে মাছ রপ্তানি দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এগুলো শুধু চিংড়ি দিয়ে হবে না, সেখানে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছেরও দরকার হবে। সেজন্য ক্রেতাদের (দেশ-বিদেশের) চাহিদানুযায়ী এবং আইন মেনে খামারিদের মাছ উৎপাদন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের ডীন অধ্যাপক রফিকুজ্জামান বকুল বলেন, আমাদের দেশের উপযোগী করে আমার দেশের মাছের জাত তৈরি করতে হবে। সেটি না হলে আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে বিদেশি জাতগুলো অনেক সময় টিকে থাকতে পারে না। ফিসটেক বাংলাদেশের মৎস্য সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে এবং দেশে শক্ত একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, ফিসটেক নিজেরাই এমন একটি গবেষণাগার তৈরি করতে পারে, যেখানে নিজেদের দেশ, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুযায়ী জাত উদ্ভাব্ন হবে। কারণ, সারাবিশ্বে গবেষণা যত উন্নয়ন সেগুলোর অধিকাংশই বেসরকারি কোম্পানির অবদান। এ ধরনের গবেষণা কাজে আমাদের মতো গবেষকদের যে কোন ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে -আমরা সেটি করবো।

ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড এর পরিচালক আতাউল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমরা ফিসটেক যে কোন যৌক্তিক প্রয়োজনে সবসময় ডিজি মহোদয়ের সহযোগিতা পেয়ে আসছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্প্রিং জেনেটিক্স এর যে তেলাপিয়ার জাত নিয়ে আমরা কাজ করছি সেখানে মৎস্য অধিদপ্তরের বড় অবদান রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে আমেরিকান ব্রিড নিয়ে আগে কাজ হয়নি। অধিদপ্তর অনেক যাচাই, বাঁছাই, পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জাতটির অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদন আমাদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। এজন্যই এত ভালো মানের এসপিআর তেলাপিয়া খামারিদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।

ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড এর চেয়ারম্যান খোন্দকার ফরহাদ হোসেন বলেন, আজ থেকে অন্তত ২০ বছর আগে ফিসটেক যখন কার্যক্রম শুরু করে তখন মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়, যা বর্তমানে অনেকাংশেই কেটে গেছে। তেলাপিয়া মাছ বর্তমানে বাংলাদেশের মানু্ষের প্রোটিন চাহিদার পূরণের অন্যতম একটি উৎস। মাছের জাত উন্নয়ন ও গবেষণায় যদি কেউ মনে করেন আমাদের সহযোগিতা দরকার, সেটির জন্য অবশ্যই আমরা প্রস্তুত আছি।

সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিং জেনেটিক্স (Spring Genetics) থেকে আগত Carloz Lopez ও Mr. Hideyosi Segovia Uno দুজন বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এছাড়াও SP Tilapia Farming in Bangladesh শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড -এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (গবেষণা ও উন্নয়ন) মো. আরিফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের পরিচালক (গবেষণা ও প্রকাশনা) ড. মো. নুরুজ্জামান। ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার ছাড়াও গাজীপুর, কক্সবাজার ও নরসিংদী থেকে আগত খামারিগণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

উল্লেখ্য যে, ২০২০ সনে আর্ন্ত্জানিক খ্যাতিসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের জেনেটিকস কোম্পানি স্প্রিং জেনেটিকস (বেঞ্চমার্কের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) থেকে সরাসরি এসপিআর তেলাপিয়ার ব্রুড নিয়ে আসে ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড; যেটির পোনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বর্তমানে চাষ হচ্ছে। এসপিআর তেলাপিয়ার (SPR Tilapia)  জাতের তেলাপিয়ার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হলো এটি স্ট্রেপ্টোককাস (Streptococcus) রোগ মুক্ত এবং প্রতিরোধী। অর্থাৎ এসপিআর তেলাপিয়াতে স্ট্রেপ্টোককাস রোগ হবেনা।

This post has already been read 3548 times!

Check Also

যে জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়, ওই জেলার মানুষ গরিব হতে পারে না -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ভোলা সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ইলিশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে একসাথে কাজ …